বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজনের গুরুত্ব আরোপ

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২৫

সরকার, বেসরকারি খাত এবং কমিউনিটির মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশ জলবায়ু-স্মার্ট সমাধান গ্রহণের গতি বাড়াতে পারে। এ প্রচেষ্টা শুধুমাত্র ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে না, বরং টেকসই উন্নয়নেও অবদান রাখবে। যদি এই পদক্ষেপগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তাহলে পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষমতায়িত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির পথে স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি সম্ভব হবে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর এক হোটেলে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘ফ্রম রিস্ক টু রেজিলিয়েন্স: হেল্পিং পিপল অ্যান্ড ফার্মস অ্যাডাপ্ট ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজনের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ মূলত পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের উপর পড়ছে, যা বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। তবে ইতিমধ্যেই ভবিষ্যতের জন্য কিছু ইতিবাচক নজির তৈরি হয়েছে, যেমন আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে ঝড়ে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়েছে। এ ধরণের কার্যকর উদ্যোগগুলো স্থানীয় অভিযোজনকে সফলভাবে সম্প্রসারণে সহায়তা করছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়া জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান আরও উন্নতি করছে। এখানে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে থাকবে এবং প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ ভয়াবহ বন্যার শিকার হবে। উপকূলীয় এলাকার পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও মাটির ক্ষয় জাতীয় জীবনে গুরুতর প্রভাব ফেলছে।

আবার, জলবায়ু ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা ও প্রস্তুতির বিষয়টি অবিচ্ছেদ্য। ভবিষ্যতে তিন-চতুর্থাংশের বেশি পরিবার ও প্রতিষ্ঠান আবহাওয়াজনিত ধাক্কার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তবে বেশির ভাগই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিবর্তে মৌলিক ও স্বল্পব্যয়ী সমাধানে reliance করছে।

বাংলাদেশের ২৫০টি উপকূলীয় গ্রামে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো অত্যন্ত জরুরি, কারণ অনেক পরিবার দুর্যোগ মোকাবেলায় মৌলিক অবকাঠামোর জন্য অপূর্ণতা অনুভব করছে। দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ৫৭ শতাংশ পরিবার দুর্যোগ-সুরক্ষা অবকাঠামোর অভাবে ভুগছে এবং ৫৬ শতাংশ পরিবার কার্যকর অভিযোজনের জন্য অর্থের অভাবে বিপন্ন। এটি শুধু পরিবেশগত নয়, মানবিক সংকটও তৈরি করছে—বিশেষ করে দরিদ্র ও কৃষি-নির্ভর পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান বিভাগের ডিরেক্টর জঁ পেম বলেন, বাংলাদেশ বারবার জলবায়ু সহনশীলতার পরীক্ষায় নাকোঁচ করছে। অভিযোজনের উদ্যোগগুলো ব্যাপক হলেও ঝুঁকি এতই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে যে আরও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে, আগাম সতর্কবার্তা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি ও ঝুঁকি ভিত্তিক অর্থায়ন। শহরাঞ্চলেও লক্ষ্যযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদি অভিযোজন পরিকল্পনার মাধ্যমে বীমা ও ঋণপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা বাড়ালে জলবায়ুজনিত ক্ষতির এক-তৃতীয়াংশ সমাধান সম্ভব। পাশাপাশি, বেসরকারি খাতের দ্রুত বিনিয়োগ ও সম্পদ স্থানান্তর এই প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করবে। সরকারের বাজেট সংকটের সময়েও পরিবহন ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রবেশাধিকার বাড়ানো এবং নমনীয় সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনের সহ-লেখক সিদ্ধার্থ শর্মা বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজনের অভিজ্ঞতা মহান, তবে ঝুঁকি ও জটিলতা বেশি, তাই অবিলম্বে সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন। তিনি জানান, দেশের মানুষ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে অভিযোজন শুরু করেছে, তবে আরো বেশি উদ্যোগ নিতে হবে যেন জলবায়ু সংকটের মোকাবিলা শক্তিশালীভাবে সম্ভব হয়।