অপারেশনাল দক্ষতায় নতুন মাইলফলকে চট্টগ্রাম বন্দর

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২৫

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর অপারেশনাল দক্ষতায় এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বন্দরে কনটেইনার, কার্গো এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংসহ সমস্ত ক্ষেত্রেই ধারাবাহিকভাবে সূচকীয় বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এর পাশাপাশি জাহাজের ‘ওয়েইটিং টাইম’ বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, যা বন্দর ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বাসস-কে জানান, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই সময়ে বন্দরে মোট ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪২ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, পাশাপাশি ১১ কোটি ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ টন কার্গো এবং ৩ হাজার ৫৫২টি জাহাজ প্রবেশ ও প্রস্থান করেছে। গত বছরের তুলনায় এই সময়ের মধ্যে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টিইইউএস, কার্গোতে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ৩৫১টির বেশি জাহাজের বৃদ্ধি দেখা গেছে। এর প্রবৃদ্ধিদের হার যখন কনটেইনারে ৪.৮৭%, কার্গোতে ১২.৬৪%, এবং জাহাজের হ্যান্ডলিংয়ে ১০.৯৭%।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এই ধারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এই সময়ের মধ্যে বন্দরে হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার ৮০৫ টিইইউএস কনটেইনার, ৪ কোটি ৫২ লাখ ৮২ হাজার ৯০৭ টন কার্গো এবং ১৪২২টি জাহাজ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল কম, তবে এখন কনটেইনারে ১ লাখ ১১ হাজার ৮৮৮ টিইইউএস, কার্গোতে ৬১ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৫ টন ও জাহাজে ১৪১টির বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালিত চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেডের অপারেশনও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এনসিটিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭১ টিইইউএস কনটেইনার ও ২৫৩টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ১৫.৫০% ও ১৯.৩৫% বৃদ্ধি।

জাহাজের ‘ওয়েইটিং টাইম’ কমে আসায় উদ্যোগটি এ বছর বড় সফলতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বন্দরের সেক্রেটারি প্রকাশ করেন, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরতেই জাহাজের অপেক্ষার সময় ছিল শূন্য। অর্থাৎ, আগমনের পরে সেদিনই জাহাজকে ‘অন অ্যারেরাইভাল’ বার্থে নেওয়া হয়, ফলে দ্রুত পণ্য খালাস ও জাহাজীকরণ সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে দেশের পোর্ট লিড টাইম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।

বন্দরের উন্নতি সম্ভব হয়েছে আধুনিক কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংযোজন, ইয়ার্ড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ও ব্যবহাকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্য। সম্প্রতি মের্স্ক শিপিং লাইনের প্রতিনিধিদলও এই উন্নত পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে বলে জানা গেছে। তারা বিশেষ করে জাহাজের অপেক্ষার সময় শূন্যে নেমে আসা এবং সার্ভিস স্ট্যান্ডার্ড বৃদ্ধিকে ‘উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন’ বলে স্বীকৃতি দেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইয়ার্ড ক্যাপাসিটি সম্প্রসারণ, আধুনিক প্রযুক্তি, কর্মীদের দক্ষতা, ও বিভিন্ন পক্ষের সহযোগিতা এই অগ্রগতিকে ধারাবাহিক রাখতে ভূমিকা রেখেছে। এর পেছনে রয়েছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন, ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, শ্রমিক-কর্মচারীদের পরিশ্রম ও ব্যবহাকারীদের সহযোগিতা।

সাম্প্রতিক সময়ে সিঙ্গাপুর থেকে আগত মায়ের্স্ক শিপিং লাইনের প্রতিনিধি দলও চট্টগ্রাম বন্দরের এই উন্নত অপারেশনাল সক্ষমতা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বিশেষভাবে জাহাজের অপেক্ষার সময় শূন্যে নামানো, ও এনসিটি ও অন্যান্য টার্মিনালের উন্নত সার্ভিস استاندার্ডের প্রশংসা করেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের এই সফলতা দেশের বাণিজ্য ও অবকাঠামোর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্বাস সংশ্লিষ্ট মহলের। এটি বাংলাদেশকে সামুদ্রিক বাণিজ্যে আরও অধিক শক্তিশালী অবস্থানে উন্নীত করবে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যকে আরও উৎসাহিত করবে এমন প্রত্যাশা প্রকাশ করছে বন্দরের কর্মকর্তারা।