বাংলাদেশ-চীন বিআরআই সহযোগিতা টেকসই উন্নয়নে এগিয়ে যাবে Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২৫ বাংলাদেশে চীনা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা আগামী দশকে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছাবে। এই সহযোগিতা যতটা প্রয়োজনীয়, তার মাত্রা বাড়বে শিল্পখাতের বৈচিত্র্য, উৎপাদনের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারকে চীনের ভিতরে আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে। চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি)-এর সভাপতি হান কুন বলেছেন, বিআরআইর পরবর্তী ধাপে মূল গুরুত্ব থাকবে টেকসই প্রকল্পের বাস্তবায়ন, যৌথ অর্থায়ন এবং বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ। তিনি উল্লেখ করেন, বিআরআই শুধুমাত্র চীন অর্থায়িত কোনো প্রকল্প নয়; বরং এটি একটি দ্বিপাক্ষিক ও যৌথ বিনিয়োগের কাঠামো। একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে হান বলেন, অনেক সময় ভুল ধারণা করা হয় যে, বড় বড় প্রকল্পগুলো চীন এককভাবে অর্থায়ন করে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বিআরআই একটি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কাঠামো, যেখানে উভয় দেশই প্রকল্পে অংশ নেয়। এটি একমুখী নয়; বরং পারস্পরিক সুবিধা লাভের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।’ তিনি জানালেন, এখন পর্যন্ত ১৪০টির বেশি দেশ এই উদ্যোগে অংশ নিয়েছে, ফলে একক কোনো দেশের পক্ষে সব প্রকল্পে অর্থায়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘চীনের অর্থনীতি এখন শক্তিশালী হলেও সব প্রকল্পে সমানভাবে অর্থায়ন সম্ভব নয়। টেকসইতা নিশ্চিত করতে হলে অর্থের ভাগাভাগি, সুবিধার ভাগাভাগি ও প্রকল্পের বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।’ বাংলাদেশ ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই উদ্যোগে যুক্ত হয়। এরপর থেকে বড় বড় প্রকল্পগুলো—যেমন সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র, টানেল এবং সড়ক অবকাঠামো—বিভিন্ন চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। উৎস হিসেবে রয়েছে রেয়াতমূলক ঋণ, বাণিজ্যিক ঋণ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ। হান কুন বলেন, ‘শুধু নির্মাণে নির্ভরশীল নাকি চুক্তিভিত্তিক কাজের বাইরে এর সাথে যুক্ত হবে শিল্প, বাণিজ্য, প্রযুক্তি, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং ব্যবসায়িক মডেলও। চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে সাংস্কৃতিক শিল্প—যেমন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ, মিডিয়া বিনিময়—অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর করে তুলতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘চীনের নতুন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলে এবং উভয় পক্ষ কার্যকরভাবে সহযোগিতা করলে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। সিইএবি’র মাধ্যমে দু’দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে সংযোগ আরও সুদৃঢ় হবে এবং অংশগ্রহণের পরিধি আরও বেড়ে যাবে।’ আগামী দশকের মধ্যে বাংলাদেশ-চীন বিআরআই সহযোগিতা নিয়ে তিনি প্রত্যাশা প্রকাশ করেন, শিল্পের বৈচিত্র্য বাড়ানো, উৎপাদন প্রতিযোগিতার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের রপ্তানি চীনে বিস্তৃত করার ওপর জোর দেওয়া হবে। এই যৌথ উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি তালিকা সম্প্রসারিত হচ্ছে, যার মধ্যে সাম্প্রতিক বড় উন্নয়ন হলো—চীন বাংলাদেশের আমের প্রবেশের অনুমোদন। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী বছরগুলোতে কাঁঠালসহ অন্যান্য পণ্যও অনুমোদন পেতে পারে। তবে আমাদের আরও রপ্তানিযোগ্য পণ্য চিহ্নিত করতে হবে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ অবকাঠামো উন্নয়নে এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও পানিসম্পদ ভিত্তিক transports ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ধীরে ধীরে আরও উন্নত হবে। চ্যালেঞ্জ থাকার পরও হান মনে করেন, বিআরআইয়ের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। এই প্ল্যাটফর্ম ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সুফল দেখিয়েছে এবং উভয় দেশের অগ্রাধিকার অনুযায়ী আরও বিকশিত হবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-চীন বিআরআই সহযোগিতা আরও বিস্তৃত হবে এবং আরও কার্যকরী হবে, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য সহায়ক।’ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই সহযোগিতা কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার পরামর্শ দিয়ে হান জানান, ‘বিআরআই কেবল চীন অন্যদের সহায়তা করছে এমন ধারণা ঠিক নয়; এটি একটি যৌথ ও টেকসই উন্নয়নের কাঠামো, যেখানে উভয় দেশই উপকৃত।’ সরকারি পর্যায়ের (জিটিউজি) প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়া নিয়ে কথাও বলেন হান। তিনি বলেন, অনেক বড় প্রকল্পের অনুমোদন সময়ে বিলম্ব হয়, কারণ প্রতিটি ধাপে চীন ও বাংলাদেশের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এর ফলে সময় বেশি লেগে যায়। তিনি প্রস্তাব করেন, সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত যাতে কাজের গতি বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। SHARES অর্থনীতি বিষয়: