মির্জা ফখরুল : আমরা একটি ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২৫

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে আমরা একটি ট্রানজিশনাল পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতি এক ধরনের দোলাচলে রয়েছে; নির্বাচন ঘিরে আশঙ্কার雖বালক, যদিও নির্বাচন শিডিউল এখনও নির্ধারিত হয়নি। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যাবে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, নির্বাচনের ফলাফল সব কিছু নয়। আসল উদ্দেশ্য হলো একটি সুদৃঢ় গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। ডেমোক্রেসি ও ব্যক্তির ভোটের অধিকারকে সুদৃঢ় করতে পারলেই মূল সাফল্য হবে বলে তিনি মনে করেন।

গতকাল বুধবার ঢাকার গুলশানে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানটি ছিল ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর আয়োজনে। অনুষ্ঠানে বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার অংশগ্রহণ করে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, টেকসই একটি রাষ্ট্র গড়তে বিচার বিভাগ, সংসদ, গণমাধ্যম ও প্রশাসনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলা জরুরি। গত ১৬ বছরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর রাজনৈতিক নিপীড়ন, গুম, হত্যা এবং মিথ্যা মামলার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, বিএনপি হলো একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। পৃথিবীর কোনো লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিই এরকম নিষ্ঠুরতা সহ্য করেনি। ৬০ লাখের বেশি মিথ্যা মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়িত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। এসব ঘটনা ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্ক হয়ে রয়েছে, যা গবেষণার মাধ্যমে নথিভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংস্কার আর উন্নয়নের নামে চলমান বিতর্কের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকলেও দুর্বত্তের কারণে আবেগে চলমান সংস্কার আন্দোলনকে ব্যাহত করতে চাচ্ছে কিছু মহল। বিএনপি এবার কোনো বিপ্লবী দল নয়, বরং একজন লিবারেল ডেমোক্রেটিক দল হিসেবে সকল ধর্ম, বর্ণ, মত ও বিশ্বাসের মানুষের যুক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন, ‘আমরা সবসময় বলি—উই আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটস।’

অন্যদিকে, তিনি বলেন, দেশে একদিকে শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও মারামারি চলছে। তিনি জানেন না, এই পরিস্থিতির পেছনে কোন মহল একটি বিশেষ মহল কী উদ্দেশ্যে এই পরিস্থিতি তৈরি করছে। কোনো মহল বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কি না, সেটাও দেখা জরুরি।

গণতন্ত্রের চর্চার অনুপস্থিতিকে দেশের দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মূল ধারণা হলো, আমি তোমার মতের সঙ্গে একমত নতেই পারি, তবে তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমি জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব। দুর্ভাগ্যবশত, এখন অনেকেই অন্যের মতের জন্য সহনশীল নন।

খালেদা জিয়ার গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান স্মরণ করে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছোট বিবৃতিতেই দল ও দেশকে সামনে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা আছে—“প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়, আসুন আমরা সবাই একসাথে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করি।” বিদেশে থাকা তারেক রহমানও গণতন্ত্রের পক্ষে জনগণকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে উল্লেখ করেন।

সভার সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। এতে আরও বক্তব্য দেন দলের অন্যান্য সদস্য, বিভিন্ন নেতাকর্মী, ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।