রমজান ও নির্বাচন উপলক্ষে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধির আহ্বান

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২৫

এবারের পবিত্র রমজান এবং জাতীয় নির্বাচন প্রায় একই সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় নিত্যপণ্যের দামে চাপ পড়ার আশংকা বেড়েছে। এরমধ্যে বাজারে পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ নিশ্চিত করে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ও ব্যবসায়ী নেতারা অগ্রাধিকার দিয়েছেন। বুধবার মতিঝিলের দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এক সভায় এই মন্তব্য করেন তারা।

এফবিসিসিআই’র প্রশাসক আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল থাকলেও রমজানে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। এ জন্য রোজার সময়ে ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে সহজতা আনার জন্য এলসি মার্জিন কমানো হয়েছে। সব অংশীদার—উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সজাগ থাকতে হবে যেন বাজারে কোনও অরাজকতা না হয়। তিনি আরও বলেন, চাঁদাবাজি ও পরিবহন ব্যবস্থায় যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সেই বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।

বাজারে ভেজাল ও খাদ্যে অবৈধ উপাদান মিশ্রণ রোধে ব্যবসায়ী নেতারা সতর্ক থাকতে বলেছেন। পণ্যের দাম স্বাভাবিক ও সহজলভ্য রাখতে অঙ্গীকারের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় আচরণ নীতিমালা মানতে হবে।

পাইকারি ভোজ্যতেলের দোকান সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা জানান, ভোজ্যতেলের সরবরাহ সঠিক থাকলে বাজারে কোনো অস্থিরতা সৃষ্টি হবে না। বর্তমানে ‘আন্ডাররেট’ প্রকল্প চালু থাকলেও, দামিরিয়েটার মাধ্যমে তেল বিশেষ এক গ্রুপের কাছে বিক্রি হয়, যেখানে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়। তাই এই ডিও প্রক্রিয়ার ওপর তীক্ষ্ণ নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

টিকে গ্রুপের পরিচালক আতাহার তাসলিম বলেন, দেশে বার্ষিক ২২-২৩ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়; এর অধিকাংশ সরবরাহ করেন তিনটি বড় কোম্পানি। রমজানে বাড়তি চাহিদা মেটাতে হলে অবিলম্বে আমদানির ওপর জোর দিতে হবে। এছাড়া, শীতকালে গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে, যা সরবরাহের ওপর প্রভাব ফেলে। এ জন্য গ্যাস সরবরাহ নিয়মিত রাখতে হবে।

মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুল হক বলেন, পোর্টে শুল্ক বাড়ার কারণে পণ্য আমদানির খরচ বেড়েছে, ফলে দাম ওঠে আসছে। এছাড়া, লাইটার জাহাজের স্বল্পতা ও সরবরাহে ব্যাঘাতের কারণে বাজারের গতি ধীর হতে পারে।

শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন অভিযোগ করেন, কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা মোড়ক লাগিয়ে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে। সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং চাঁদাবাজি ও দালালবাজি বন্ধ করা। তিনি বলেন, পুলিশ অনেক সময় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়েই সহায়ক ভূমিকা পালন করে, যা সাধারণ ক্রেতাদের ক্ষতিগ্রস্থ করে। শুধু সরবরাহ বাড়ালেই দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, এর জন্য বিভিন্ন অঙঙ্গীকার ও দায়িত্বশীলতা জরুরি।

বাজার বিশ্লেষক কাজী আবদুল হান্নান বলেন, নির্বাচনের সময় অতিরিক্ত টাকার প্রবাহ ও রমজানে চাহিদা বেড়ে যায়, যা বাজার অস্থির করে তুলতে পারে। এছাড়া, অপ্রত্যাশিত দামের উর্ধগমন যেমন পেঁয়াজের দামে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি, সেটি স্বাভাবিক নয়। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা ভয় পেয়ে গতিশীলতার সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা নিচ্ছেন। তিনি বাজার পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন।