বিদেশেও প্রশংসিত বগুড়ার জনপ্রিয় ‘কটকটি’

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৫

খাওয়ার সময় কটকট শব্দ হওয়ার কারণে স্থানীয়রা এই শুকনো মিষ্টি খাবারটির নাম দিয়েছেন কটকটি। এটি বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী শত বছরের পুরোনো সুস্বাদু খাবার, যা অনেকের কাছেই মহাস্থানের বিশেষ মিষ্টি হিসেবে পরিচিত। এই মজাদার খাবারটির সুনাম এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে ইউরোপ, আเมেরিকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। এর স্বাদ ও অনন্যত্বের কারণে কটকটি এখন বগুড়ার গর্ব।

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত মহাস্থানগড়। এই ঐতিহাসিক স্থানটি প্রত্নতাত্ত্বিক সৌন্দর্য ও দর্শনীয় নিদর্শনের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত হলেও, এখানের কটকটির ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই মিষ্টি খাবারটি শতাধিক বছর ধরে মহাস্থানগড়ে তৈরি এবং বিক্রি হয়ে আসছে।

উনিশ শতকের গোড়ার দিকের কথা, যখন স্থানীয় কিছু মানুষের হাতে প্রথম এই শুকনো মিষ্টি তৈরি শুরু হয়। চাল বা গমের আটা ও গুড় মিশিয়ে প্রস্তুত করা এই খাবারটি শুরুর দিকে বেশ শক্ত ছিল এবং খেতে কটকট শব্দ হতো। তবে সময়ের পরিবর্তন ও উন্নতির কারণে এখন এটি নরম ও সুস্বাদু রূপে প্রস্তুত হয়।

স্থানীয় প্রবীণরা স্মরণ করে বলেন, প্রায় দেড়শো বছর আগে বগুড়ার গোকুল ইউনিয়নের পলাশবাড়ী উত্তরপাড়া এলাকার জয়নাল আলী মণ্ডল, ভোলা মণ্ডল ও গেদা মণ্ডল প্রথম এই কটকটি তৈরি শুরু করেন। তখন গ্রামে মেলা বা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় এটি পরিবেশন হত। সহজলভ্য উপকরণ ও চমৎকার স্বাদের কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বর্তমানে মহাস্থানগড়ের প্রায় শতাধিক দোকানে এই কটকটির বিক্রি হয়। প্রতিদিন শত শত কেজি এই মিষ্টি বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এর দাম বিভিন্ন স্তরে ভিন্ন, যেমন ডালডা ভাজা কটকটি কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা, ঘি স্প্রে করা ২২০ টাকা ও পোলার চালের কটকটি ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়।

প্রতিবার বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবারে, হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখীর (রহঃ) বিজয় দিবসে, হাজার হাজার মণ কটকটি বিক্রি হয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। দর্শনার্থীরা মহাস্থানগড় ঘুরে ফেরার পথে তবারক হিসেবে এই মিষ্টি নিয়ে যান। বর্তমানে এটি দেশের বাইরে শতাধিক দেশে পৌঁছে গেছে।

কটকটির ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি শুধু একটি খাবার নয়, বরং বগুড়ার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং গর্বের প্রতীক। প্রতি বছর এই পণ্য থেকে মহাস্থানগড়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকার লেনদেন হয়।

শাহ আলম, একজন কটকটি ব্যবসায়ী, বলছিলেন, আমাদের পরিবার এই পেশায় ছয় পুরুষ ধরে যুক্ত। এখন আরও অনেকেই এই পেশায় আসছে। মহাস্থান মাজারের সঙ্গে এই ব্যবসা বছরের বিভিন্ন সময়ই চলে।

কারিগর মজনু জানান, তারা ছোটবেলা থেকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। সততার সঙ্গে কটকটি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের বগুড়ার কর্মকর্তা মো. রাসেল বলেন, মহাস্থানগড় মাজার এলাকায় কটকটির উৎপাদন ও বিক্রয়ে নিয়মিত তদারকি করা হয়। ভেজাল রঙ বা সেকারিনের ব্যবহার এড়ানোর জন্য সতর্ক করা হয়। দোকান ও কারিগরদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।