নরসিংদীর তিন উপজেলার কৃষি অর্থনীতিতে বদলে দিচ্ছে বিলাতি ধনিয়া ধনিয়া Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৫ নরসিংদী জেলার তিন উপজেলার কৃষকদের মধ্যে দিনের পর দিন জনপ্রিয় হচ্ছে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ। কম খরচে বেশি লাভ এবং বাজারে এর ক্রমবর্ধমান চাহিদা থাকায়, কৃষকেরা এই পাতার cultivation-এ ঝুঁকছেন। এই মসলা জাতীয় উদ্ভিদটি আকার, স্বাদ এবং গন্ধে অনন্য, ফলে এটি এখন জেলার অন্যতম সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে শিবপুর, বেলাবো এবং মনোহরদী উপজেলার কৃষকেরা এই অভিন্ন পণ্যে লাভবান হচ্ছেন। বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ নরসিংদীর কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের কৃষক জজ মিয়া (৬০) প্রায় ৩০ বছর ধরে সবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করছেন। সম্প্রতি তিনি ১০ শতক জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার আবাদ শুরু করেছেন, যার থেকে ইতোমধ্যেই ৭২ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি আশাবাদী, আরও ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার পাতাও বিক্রির সুযোগ রয়েছে। তার এবছরের খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। তিনি বলেন, একসময় এই পাতার চাহিদা ছিল না, তবে এখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর কদর বেড়েছে। খরচ কম, যত্ন কম, অথচ লাভ বেশি—এটাই এর বড় সৌন্দর্য। অপর একজন স্থানীয় বাসিন্দা জুলেখা বেগম (৫০) বলছেন, আট শতক জমিতে তিনি ১২ হাজার টাকা খরচ করে এই ধনিয়া চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার টাকার পাতা বিক্রি করেছেন, আরও ১০-১২ হাজার টাকার পাতা বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই আবাদে সার ও পানির খরচ খুব কম, ফলে লাভের পরিমাণ বেশি। সবজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতি কেজি বিলাতি ধনিয়া পাতা আকারভেদে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এই ধনিয়া পাতার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেলাবো উপজেলার বটেশ্বর এলাকার বাজারে একে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে কার্যক্রম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতারা এখানে এসে এই পাতার বড় পরিমাণ কিনছেন। স্থানীয় কৃষকরা মনে করেন, যদি সরকার বাজার ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণ সুবিধা বাড়ায়, তবে বিলাতি ধনিয়া পাতা রপ্তানি পণ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিতে পারবে। বিশেষ করে শীতকালীন মৌসুমে এর উৎপাদন বেশি হয়, তাই সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে কৃষকেরা আরও বেশি উপকৃত হবেন। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এই বছর নরসিংদীতে ৫৫ একর জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হয়েছে। আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। তুলনামূলক বড়, তীব্র গন্ধযুক্ত এবং ঝাঁজালো স্বাদে এই ধনিয়া এখন হোটেল-রেস্তোঁরা থেকে শুরু করে ঘরোয়া রান্নায় ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এই ধনিয়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করা হয়। খবর পাওয়া গেছে, কৃষকদের মধ্যে এই ফসলের চাষে আগ্রহ বাড়ছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা এখানে আসেন ধনিয়া কিনতে। সকাল থেকেই বাজারে জমে ওঠে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ভিড়। পাইকারি বিক্রেতা আবদুল আলীম (৪৫) বাসস-কে জানালেন, তিনি এখানকার বটেশ্বর বাজার থেকে এই পাতাগুলো কিনে ঢাকায় পাঠান। প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা দরে এটা বিক্রি হয়। সব খরচ বাদ দিলে কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা লাভ হয়। তার মতে, এখানকার পাতাগুলোর গুণগত মান খুব ভালো। নরসিংদী সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু কাউছার সুমন বলেন, “আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে ধনিয়া পাতায় তিন ধরনের ভিটামিন রয়েছে—এ, সি ও কে। ভিটামিন এ ত্বক ভালো রাখে, সি পেটের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং কে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। যদি কারও বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তাহলে এর সরবত পান করলে সমস্যা সমাধান হবে।” কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষে মাটি বা আবহাওয়া কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না। অল্প সেচ, জৈব সার ও পরিচর্যায় সহজেই ফলন ভালো হয়। নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বেলাবো উপজেলা কর্মকর্তার মতে, সঠিক প্রশিক্ষণ ও বীজ সরবরাহের মাধ্যমে কৃষকরা এই চাষে পারদর্শী হয়ে উঠছেন। তিনি আরও বলেন, এক বিঘা জমিতে সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে তিন থেকে চার লাখ টাকার ধনিয়া পাতা বিক্রি সম্ভব। এর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম, ফলে কৃষকেরা এই ফসল থেকে ব্যাপক লাভে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিলাতি ধনিয়া পাতার আবাদ নরসিংদীর কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। যদি সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকে, তবে এই ফসল ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও নিজেদের জায়গা করে নেবে। SHARES অর্থনীতি বিষয়: