আফগানিস্তানে সূচক ভৌগোলিক কারণ ও ভূমিকম্পের কারণবর্ণনা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২৫

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-এ-শরিফের কাছে সোমবার ভোরে ৬.৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে কমপক্ষে ২০ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। শুধু কিছু মাস আগে একই অঞ্চলে একাধিক ভূমিকম্প ও আফটারশক ঘটেছিল, যার ফলে প্রায় ২,২০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে—আফগানিস্তানে এত বেশি ভূমিকম্প কেন ঘটে?

পাহাড়ে ঘেরা এই দেশটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশের একটি। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে ভূমিকম্পের কারণে। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫৬০ জনের মৃত্যু হয়, আর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় প্রায় ৮ কোটি মার্কিন ডলার। ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত, দেশটিতে পাঁচ মাত্রার বেশি শক্তিশালি অন্তত ৩৫৫টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।

ভূতত্ত্বীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আফগানিস্তান ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেট কেন্দ্রিক। এর দক্ষিণে রয়েছে ভারতীয় ও আরবীয় টেকটোনিক প্লেট। এই তিনটি প্লেটের সংঘর্ষের কারণে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রবণতা দারুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, ভারতীয় প্লেটের উত্তরে গতি ও ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষ এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের মূল কারণ।

কোন কোন এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ? দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল, যেমন উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানী কাবুলও এই প্রাকৃতিক বিপদের থেকে মুক্ত নয়। অনুসন্ধানীয় গবেষণায় দেখা গেছে, কাবুলে প্রত্যেক বছর গড়ে প্রায় ১ करोड़ ৭০ লাখ ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয় ভূমিকম্পের কারণে। পাহাড়ি এলাকা অবশ্য ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকায় প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। ১৯০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত, আফগানিস্তানে প্রায় ১০০টি বিধ্বংসী ভূমিকম্প ঘটেছে। ২০২২ সালে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে এক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আর ২০২৩ সালে এক মাসের মধ্যে আরও একই পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা এই অঞ্চলের দুর্বলতা প্রকাশ করে।

২০১৫ সালে, ৭.৫ মাত্রার এক ভূমিকম্পে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতের মোট ৩৯৯ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে, তিন মাসের মধ্যে দুইটি বড় ভূমিকম্পে যথাক্রমে ২,৩০০ ও ৪,৭০০ জনের প্রাণহানি হয়েছিল।

প্রফেশনাল বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কমাতে হলে নতুন ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প-সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি পুরোনো ভবনগুলো সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি উন্নত মনিটরিং ব্যবস্থা, আগ্রিম সতর্কতা, ভূতাত্ত্বিক ফল্টলাইন সনাক্তকরণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাসস্থান পুনর্বিন্যাস করাও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভবিষ্যতে প্রাণহানি এবং আর্থিক ক্ষতি কমানো যায়।