বাংলাদেশ ব্যাংকের পাসওয়ার্ড চুরির মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাৎ

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২৫

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন চক্র বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সঞ্চয়পত্রের জমা এবং ভাঙানোর অপকর্ম চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই চক্রটি এনএসসি সিস্টেমের জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। ইতিমধ্যে তারা বিভিন্ন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তা ভেঙে নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করেছে, যার পরিমাণ এখন পর্যন্ত ২৫ লাখ টাকার বেশি। এ ধরনের আরও প্রায় ৫০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বাধা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে কেনা সঞ্চয়পত্রের গোপন পাসওয়ার্ডের অপব্যবহার এই জালিয়াতির মূল কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এবং এখন মামলার প্রস্তুতি চলছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা এই জালিয়াতি এবং অর্থ লুটের সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাসওয়ার্ডের অবৈধ ব্যবহারে মূলত সিস্টেমের দুর্বলতা এবং এই তথ্যের যথাযথ নিরাপত্তার অভাবই এর কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্র কেনার সময় যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দেয়, সেই হিসাবেই সুদ ও মূলধন পাঠানো হয়। তবে সম্প্রতি ব্যাংকগুলো থেকে অনেক গ্রাহক টাকা উত্তোলনে ব্যর্থ হচ্ছেন, যা অনেকে ব্যাংক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাধান চাচ্ছেন। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ হয়তো জালিয়াতি ঘটাতে পারে বলে ধারণা করছে ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে এক ব্যক্তির কাছে ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা হয়। তার ব্যাংক হিসাবটি আছে অগ্রনী ব্যাংকের প্রেসক্লাব শাখায়। চার দিন পর—সোমবার—সঞ্চয়পত্রটি ভেঙে টাকা উত্তোলন করা হয় এবং অন্য একটি ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয়, যা পরে অন্য ইউনিট থেকে তুলে নেওয়া হয়। একই দিনে ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে আরও ৫০ লাখ টাকার অপচেষ্টা চালানো হয়, যা তদন্তে ধরা পড়ে এবং আটকে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তিনটি ঘটনার মধ্যে কোথাও গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর জন্য আবেদন করেননি এবং তাদের মোবাইল নম্বরে ওটিপি পৌঁছায়নি। এজন্য পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা নিয়ে আরও কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে। ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় সঞ্চয়পত্রের ব্যবস্থাপনায় জালিয়াতি ঠেকাতে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে।

এ পর্যন্ত, আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিভিন্ন অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে ৩ লক্ষ ৪০ হাজারের বেশি সঞ্চয়পত্র রয়েছে যার মূল্য ಸುಮಾರು ৭০ ট্রিলিয়ন টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস মিলেযে সব মিলিয়ে আনুমানিক ১২ হাজার শাখার মাধ্যমে এসব সঞ্চয়পত্র কেনা ও বিক্রি হয়। তৌহিদুল আলম খান, এনআরবিসি ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জানান, ঘটনার পর তারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, যারা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিস্তারিত বিষয় জানানো হবে।