রিজার্ভের পুনরুদ্ধারে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও আস্থার উন্নতি Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২৫ বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিক উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, এর অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পুনরুদ্ধার এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি। এই অগ্রগতি অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এবং আস্থার পুনর্জাগরণের এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধারাবাহিক উন্নতি বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য বজায় রাখতে ও বিনিময়হার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া নীতির সফলতা প্রতিফলিত করে বলছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩২.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে, আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যাণ্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই পরিমাণ হয় ২৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ দেশের মোট আমদানি ব্যয় প্রায় ৫.৫ মাসের জন্য কভার করতে সক্ষম, যা আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি। যদিও আদর্শ রিজার্ভ অন্তত ছয় মাসের আমদানি ব্যয় কভার করা উচিত, তবুও বর্তমান পরিস্থিতি বেশ স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একই সাথে, রেমিট্যান্স প্রবাহে এসেছে রেকর্ড বৃদ্ধি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এই প্রবাহ বেড়ে গেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিভিন্ন সূচক অনুযায়ী রেমিট্যান্সের পরিমাণ ইতোমধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা আগের রেকর্ড অর্থবছর থেকেও অনেক বেশি। প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞমহল মনে করেন, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ। এতে শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হয়নি, বরং টাকার বিনিময়হারও স্থিতিশীলতা এসেছে, যা দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যকে সুদৃঢ় করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফের প্রতিনিধি থমাস হেলব্লিং এ বিষয়ে বলেন, দেশের লেনদেনের ভারসাম্য বজায় থাকায় রিজার্ভ বৃদ্ধি স্বাগত, যা সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থনীতি ও নীতির জন্য সুখবর। অর্থনীতিবিদরাও এই উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকের মধ্যে ধ্রুবতা ফিরে এসেছে। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের এই উল্লম্ফন রিজার্ভের পুনরুদ্ধার ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কমানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে, ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার সমস্যা ধীরে ধীরে কমে আসায় বৈদেশিক লেনদেন আরও স্বচ্ছ ও সহজ হচ্ছে। সরকারের প্রণোদনা নীতি, প্রবাসীদের উৎসাহিতকরণ ও বাজারের স্থিতিশীলতা এই উল্লেখযোগ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, অনুরূপ পরিস্থিতিতে এখন অবৈধ চ্যানেল কমে আসায় প্রবাসীরা আনুষ্ঠানিকভাবে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যেমন, হুন্ডি ও হাওলা চ্যানেলে অভিযান চালানোর ফলেও অবৈধ লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। ফলে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, প্রবাসীদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো বেশি স্বস্তি পাচ্ছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কায়উম চৌধুরী বলেন, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে। এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত হ্রাসের পর স্বস্তি এনে দিয়েছে। সামগ্রিকভাবে, এই উন্নয়ন দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্বস্তির সূচনা। এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথে আরও বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোতে উৎসাহ জোগাচ্ছে। SHARES অর্থনীতি বিষয়: