মেলিসার তাণ্ডবে ক্যারিবীয় অঞ্চলের তিন দেশসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৫ তীব্র হারিকেন মেলিসা ক্যারিবীয় অঞ্চলের তিনটি দেশের ব্যাপক ধ্বংসের মুখে ফেলেছে। বুধবার রাতে দক্ষিণ-পশ্চিম জ্যামাইকার নিউ হোপের কাছ দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ে এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। এই নজিরবিহীন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এখন পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির মানুষ কখনও এত ভয়ংকর ঝড় দেখেনি ১৭৪ বছরের ইতিহাসে। কেবল জ্যামাইকা নয়, কিউবা ও হাইতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকা পড়ে গিয়েছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উড়ে গিয়েছে; ফলে ব্যাপক সংখ্যক গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অন্ধকারে ডুবে রয়েছে অসংখ্য পরিবার। যদিও বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ থাকলেও, বেশিরভাগ রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে বাড়িঘর, দোকানপাট ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তবে আগে স্থানীয়দের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার কারণে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে, বলে জানিয়েছেন প্রশাসন। সহায়তা কার্যক্রম দ্রুত শুরু হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, জ্যামাইকায় ভূমিধস ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে, যা আরও বড় মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়টিকে ক্যাটাগরি-৫ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, যা ১৭৪ বছরের মধ্যে সব চেয়ে ভয়ংকর। এক শতাব্দীর মধ্যে এটিকে সবচেয়ে মারাত্মক হারিকেন বলে মনে করা হচ্ছে। জ্যামাইকাকের প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস বলেন, দেশের পরিকাঠামো এত শক্তিশালী নয় যে এই ঝড়ের মোকাবিলা করতে পারবে। তাই তিনি সংসদ ও সাধারণ মানুষের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত পুরো ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি, উদ্ধারকার্য এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি। বেশ ক’জন মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। এখনো জানা যায়নি, ঝড়ের আঘাতে প্রায় ২৫,০০০ পর্যটক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়াও, জাতিসংঘের তথ্যমতে, বার্বাডোজের একটি ত্রাণ শিবির থেকে জ্যামাইকায় প্রায় ২ হাজার ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কেবল জ্যামাইকাই নয়, কিউবা ও হাইতিতে সহায়তার পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এই ধরনের অতিরিক্ত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। এই হারিকেনটি গোটা ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য এক মানবিক সংকটের সংকেত বহন করছে। অপ্রত্যক্ষভাবে এই ঝড়ের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাত চলছে হাইতিতে, যার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাজধানী থেকে ৬৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত পেটিট-গোভেতেতে নদীর পানি উপচে পড়ার ফলে কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জন শিশু রয়েছে। এ ছাড়া, কমপক্ষে ১২ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। কিউবাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে দেশের অনেক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো সম্ভব হয়েছে। দেশের প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল টেলিভিশনে বলেননি ক্ষতির আনুষ্ঠানিক পরিমাণ, তবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশগুলোর (সান্তিয়াগো, গ্রানমা, হলগুইন, গুয়ান্তানামো ও লাস টুনাস) কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ছাদের ছত্ম, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ লাইন ভাঙা, রাস্তা ভেঙে যাওয়া এবং কৃষিকাজের ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা চালানো হলেও ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুতের লাইনের ধ্বংসের কারণে অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ। বৃহস্পতিবার ভোরে হারিকেনটি দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি ২-এ পরিণত হয়। এর বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১০৫ মাইল। বর্তমানে এটি বারমুডার দিকে এগোচ্ছে এবং বারমুডার উত্তর-পশ্চিমে অতিক্রম করার কথা। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিপর্যয় কেবলমাত্র জ্যামাইকাই নয়, পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য বড় মানবিক সংকেত নির্দেশ করছে। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: