মরক্কোতে ‘জেন জি’ বিক্ষোভে সহিংসতা, হাজারেরও বেশি অভিযুক্ত

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৫

মরক্কোতে তরুণদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ‘জেন জি’ বিক্ষোভ এখন দেশের এক বড় রাজনৈতিক অস্থিরতার রূপ ধারণ করেছে। শুরুতে শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এক ক্ষুদ্র আন্দোলন মাত্র, ক্রমে তা সহিংস দাঙ্গায় परिवर्तিত হয়। এই পরিস্থিতিতে সরকার ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছে এবং বিভিন্ন মামলার আওতায় মানুষকে আটক করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই কঠোর পদক্ষেপের নিন্দা জানালেও, সরকারের পক্ষ থেকে আনা যাচ্ছে যে, তারা আইন অনুযায়ী এবং নিরাপত্তার স্বার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, মরক্কো সরকার জানিয়েছে, এই সহিংসতায় জড়িত ২ হাজার ৪৮০ জনের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৭৩ জন এখন হেফাজতে রয়েছেন এবং তাদের বিচারের জন্য প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড চলমান। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহে অংশগ্রহণ, সরকারি কর্মীদের ওপর হামলা, সরকারি কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি এবং অপরাধে উদ্দীপণা প্রদান। সরকার বলছে, দেশের তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা এই কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।

এই আন্দোলনের শুরুর পেছনে ছিল ‘জেনজি ২১২’ নামে এক তরুণ সংগঠনের উদ্যোগ। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের ব্যয়বহুল অগ্রাধিকার এবং মৌলিক পরিষেবাগুলোর অব্যবস্থাপনা নিয়ে তারা অসন্তুষ্ট। তাদের দাবী ছিল—সরকার বেশি করে খেলাধুলার উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানসহ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টগুলো অবহেলিত রয়েছে। তরুণরা এই আন্দোলনে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলেও, কিছু শহরে তা সহিংস রূপে মোড় নেয়।

তবুও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানালেও, কিছু এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের ফলে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়, আহত হন বহু মানুষ, এছাড়াও দোকানপাট ও যানবাহনে ব্যাপক ক্ষতি হয়। কাসাব্লাঙ্কা, মারাকেশ সহ বিভিন্ন শহরে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বেড়ে যায়, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

সরকারের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম সম্পূর্ণ আইনানুগ এবং নিজস্ব দায়িত্ব পালন করছে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই দমনমূলক আচরণ অযৌক্তিক এবং মৌখিকভাবে সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। মরক্কান অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস (AMDH) তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, গ্রেপ্তারগুলো ‘এলোমেলো ও অযৌক্তিক’। অন্যদিকে, ‘জেনজি ২১২’ সংগঠনটি সকল সদস্য ও সমর্থকদের মুক্তির জন্য সোচ্চার।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সহযোগী পরিচালক হানান সালাহ বলেছেন, ‘তরুণদের ন্যায্য অধিকার ও ভবিষ্যতের স্বীকৃতি দমনপীড়নের মাধ্যমে রোধ করা যায় না।’ তিনি মরক্কো সরকারের প্রতি তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠস্বরকে শোনা এবং সংলাপে বসার আহ্বান জানান।

আটককৃতদের মধ্যে একজন জনপ্রিয় র‍্যাপার হামজা রায়েদ, যিনি তরুণদের মধ্যে পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। গত মাসে কাসাব্লাঙ্কা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার গানে প্রায়ই ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং তরুণদের ক্ষোভের কথা উঠে আসে।

অন্যদিকে, গত সোমবার রাজধানীতে তিনজন অভিযুক্ত আদালতে হাজির হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—সরকারি সংস্থাকে অবাঞ্চিতভাবে অপমান করা এবং অপরাধে প্ররোচনা দেওয়া। জানা গেছে, তারা জাতীয় ফুটবল দলের জার্সিতে প্রতিবাদী স্লোগান লিখে আনেন। যদি দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ডের শাস্তি হতে পারে। সূত্র: সিএনএন।