নির্বাচনী উৎসবে দেশ: আধা শতভাগ প্রস্তুতি, ভরসা ভোটার আস্থায় Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৫ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন তীব্র উত্তেজনা এবং উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) অবিলম্বে ভোটের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে আশাজনক ফলাফল অর্জন করছে, যাতে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়। ইতিমধ্যে তাদের সমস্ত পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রাজধানীসহ সর্বত্র নির্বাচন ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট চনমনে এবং প্রশাসনিক কাঠামো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নির্বাচন কমিশনের সূত্রে জানানো হয়, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। বিভিন্ন স্তরে—from ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, আসন সীমানা পুনর্বিন্যাস, নির্বাচন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন প্রস্তুত করার কাজ—সবকিছুই সম্পন্নের কাছাকাছি। ইসির সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই একটি উৎসবমুখর, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এজন্য সব ধরনের প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত ও আইনগত প্রস্তুতি যথাযথভাবে সম্পন্ন করছি।’ তিনি আরো জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা ও কেন্দ্রীয় ডেটাবেইস হালনাগাদের কাজ শতভাগ সম্পন্ন। চলতি বছরে প্রায় ২৫ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকের বেশি নারী। বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটির একটু বেশি—১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯, এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩০ জন। নির্বাচনের জন্য মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি কেন্দ্র ও প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ প্রস্তুত। পুরুষ ও নারী ভোটারের জন্য আলাদা আলাদা ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে—অর্থাৎ পুরুষের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ ও নারীর জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলছেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি এখন ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন। এ বছর রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন শেষ হলে পুরো প্রস্তুতি শেষ হবে।’ তিনি জানান, ১৮টি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে যা নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করবে—নির্বাচনের লজিস্টিক, আইটি, নিরাপত্তা সহ সব ক্ষেত্রে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আচরণবিধি সংশোধন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) হালনাগাদ, প্রশিক্ষণ, ও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিক। নতুন আইন অনুসারে এবার ‘না ভোট’ পুনঃপ্রচলন, ইভিএম ব্যবহারের বাধ্যতা বাতিল, প্রার্থীর সম্পদ, আয় ও করের তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকা, ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার বাধ্যতামূলক, প্রার্থীদের জন্য সম্পদ ও আয়ের সীমা নির্ধারণ, প্রাপ্ত অনুদান জানাতে হবে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। তাছাড়া, ফৌজদারি মামলার পলাতক আসামিদের প্রার্থিতা বাতিল এবং ভোটের জামানত বাড়িয়ে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এসব সংস্কার মূলত নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে ইসি। ভোট শুধু সংখ্যার মাপে নয়, আস্থার বিষয়—এটাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য। ভোটের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, সেনা ও আনসার-ভিডিপির প্রায় দেড় লাখ কর্মকর্তা ছুটে চলবে মাঠে, যাতে ভোটের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ থাকে। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাহিনীর সদস্যদের আচরণবিধি ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো মিসইনফরমেশন মনিটরিং সেল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা ভুয়া খবর, অনলাইন গুজব ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণাগুলো পর্যবেক্ষণ করবে। এর সঙ্গে এনটিএমসি, বিটিআরসি, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আইসিটির সহযোগিতা নিয়ে একটি সমন্বিত ড্যাশবোর্ড তৈরি হচ্ছে। বিদেশে ভোটারদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যানবাহন ও জীবিকার কারণে দেশের বাইরে অবস্থানরত ভোটাররা সময়মতো ভোট দিতে পারেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন শুরু হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও দেশের জন্য সম্প্রসারিত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহিতুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও দর্শন মনে রাখা হলো প্রথম ধাপ; যদি কমিশন প্রশাসন ও আইনশঙ্খলা বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, তাহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব হবে।’ প্রযুক্তিগত দিক থেকেও নতুনত্ব এনেছে ইসি। ভোটার ডেটাবেইস ও কেন্দ্রীয় সার্ভার রক্ষা এবং সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারই প্রথম, জেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্রে রিয়েল-টাইম মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল সরাসরি কমিশনকে জানানো হবে। রাজনৈতিক দলগুলোও ভোটের প্রস্তুতিতে সক্রিয় হয়ে উঠছে। শীর্ষ তিন দল প্রার্থী বাছাই ও প্রতীক বরাদ্দের কাজ শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নভেম্বরের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন হবে, যেন প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই ও তালিকা প্রকাশ সম্ভব হয়। নির্বাচন শুধু এক অ্যাক্টের বিষয় নয়, এটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের উৎসব—এমনটাই মনে করছেন অভিজ্ঞরা। নতুন উপায়ে ভোটাদের উদ্বুদ্ধ করতে গ্রামগঞ্জের পর্যায়ে গণসচেতনতা প্রচার শুরু হয়েছে। রেডিও, টেলিভিশন, সামাজিকমাধ্যম, ইউনিয়ন পরিষদে পোস্টার, ব্যানার, শর্ট ভিডিও এবং জনসাধারণের সমাগমে এই প্রচেষ্টা চলবে। অর্থাৎ, এবারকার ভোটে গর্ভে আস্থার সংকট কাটিয়ে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটে অংশগ্রহণের জন্য মরিয়া। নির্বাচন কমিশনের তথ্য ও প্রচার বিভাগের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, বিশেষ করে নারী ও তরুণ ভোটারদের প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মূলত, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী যুবকদের আকৃষ্ট করাই লক্ষ্য। সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক অঙ্গণ, প্রশাসন ও সাধারণ জনগণের দৃষ্টি এখন উত্তরণের দিকে— কেমন হবে এই নির্বাচন। ইসির দাবি, তাদের প্রস্তুতি শতভাগ, আর বাকিটা দেশের ভোটারদের পারফেক্ট আস্থা। নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে আরও এক নতুন অধ্যায় যোগ হবে বলে আশা করছে সব পক্ষ। এই নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এক অনন্য মাইলফলক হয়ে উঠবে—এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। SHARES জাতীয় বিষয়: