ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের দেড় কোটি মানুষ খাদ্যসংকটে পড়বে Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোর প্রায় এক কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও, চরম অপুষ্টির সম্মুখীন হতে পারেন ১৬ লক্ষ শিশু। এই তথ্য প্রকাশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয় تاریক পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ) ও জাতিসংঘের তিন সংস্থা।প্রতিবেদনের অনুযায়ী, বছরটির প্রথম চার মাসের তুলনায় শেষ আট মাসে খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, সামগ্রিকভাবে গত বছরের তুলনায় এই বছর খাদ্যসংকটে পড়া মানুষের সংখ্যা কমে এসেছে।গত বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন–মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক যৌথ অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সেখানে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ইউনিসেফ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিনিধিরা মূল প্রতিবেদনে অংশ নেন।প্রতিবেদনটি পাঁচ ধাপে মূল্যায়ন করে খাদ্যঘাটতি, অপুষ্টি ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে। নির্ধারিত ধাপগুলো হলো: ধাপ ১—সর্বনিম্ন বা স্বাভাবিক, ধাপ ২—চাপে থাকা, ধাপ ৩—সংকটে থাকা, ধাপ ৪—জরুরি অবস্থা, এবং ধাপ ৫—দুর্ভিক্ষ।প্রতিক্রিয়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা আইপিসি প্রতিবেদনের সঙ্গে কোনো আপোস করছি না। সমস্যা রয়েছে, তবে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা কমানো সম্ভব হয়েছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নির্ধারিত জেলেদের মোট প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। এর মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তন, তহবিলের অভাব, স্যানিটেশন অবকাঠামোর দুর্বলতা এবং খাদ্য বৈচিত্র্যের অভাব।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তা, খাদ্য নিরাপত্তা উন্নতকরণ, পুষ্টি সেবা ও নজরদারি বাড়ানো, কৃষি ও মাছের খাতের সহায়তা বৃদ্ধি এবং পরিস্থিতি সব সময় পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি।অনুষ্ঠানে আইপিসি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এফএও ও ডব্লিউএফপি’র বাংলাদেশের সমন্বয়কারী মো. মঈনুল হোসেন রনি এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের নিউট্রিশন ক্লাস্টার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রুহুল আমিন। মূল প্রতিবেদনটি উল্লেখ করে বলা হয়, দেশের ৩৬ জেলায় ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ বছর কোনও জেলায় দুর্ভিক্ষ বা ধাপ ৫ চিহ্নিত হয়নি। জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বা ধাপ ৪ দেখায়নি কোনও জেলাকে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিতে পারে, যেখানে সংখ্যাটি প্রায় তিন লাখ ৬০ হাজার হতে পারে।প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১৬টি জেলার মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ ধাপ ৩–এ (খাদ্যসংকট) ছিল, আর মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সেই সংখ্যা বেড়ে ১৩টি জেলার ১ কোটি ৬০ লাখে দাঁড়াতে পারে। সেই জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বান্দরবান, রাঙামাটি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার। বিশেষ করে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে, যেখানে রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে, আরও বেশি মানুষের খাদ্যসংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এই শিবিরপূর্ব অংশ এবং শিবিরবিহীন এলাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীরও খাদ্যসংকটে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে খাদ্যে সমস্যা কমেছে। সেই সময়ে কিছু জেলা ধাপ ২-এ উন্নীত হয়েছে, যেমন নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট। তবে বাগেরহাট এবার ধাপ ৩–এ এসেছে।২০২৩ সালের তুলনায় এই বছর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গত বছরের শেষ কোয়ার্টারে (অক্টোবর—ডিসেম্বর) খাদ্যসংকটের হার ছিল ২৪% এবং জরুরি অবস্থা ছিল ২%। দুর্যোগজনিত কারণে যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন এসব জেলায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেশি দেখা গিয়েছে।প্রতিবেদনে অপুষ্টির বিষয়ে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১৮টি দুর্যোগপ্রবণ জেলায় ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সি ১৬ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার হতে পারে। একই সময়ে, ১ লাখ ১৭ হাজার অন্তঃসত্তা ও শিশু মা তাদের সত্যিকারের বুকের দুধ পান করানোর সময়েও অপুষ্টির শিকার হতে পারেন। বিশেষ করে কক্সবাজার ও ভাসানচরের রোহিঙ্গা সমাজে ৮১ হাজারের বেশি শিশু ও ৫ হাজার মা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে পারে।আলোচনাসভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, আমাদের জলবায়ু-সহনশীল প্রজনন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি, যাতে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তিনি আরও বলেন, সবাই মিলে খাওয়ার ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রবেশের পথ সুগম করতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য সক্ষমতা বাড়াতে হবে যাতে কেউই পিছিয়ে না থাকে।প্রসঙ্গত, ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লোয়ার্স বলেন, এই খাদ্যসংকটের তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। অপুষ্টির ফলে শিশু স্কুলে যেতে পারে না, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে না। তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন, এখন শুধু পরিকল্পনা নয়, সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে যাতে খাদ্য নিরাপত্তা ও অপুষ্টি কমে আসে।এফএও বাংলাদেশের উপপ্রতিনিধি ডিয়া সানৌ বলেন, এই সংখ্যাগুলো মোকাবিলা করা কঠিন নয়, সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা থাকলে। সমস্যাগুলোর মূল কারণ দ্রুত খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে।ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমোন পার্চমেন্ট পরামর্শ দেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর প্রস্তুতি এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তালহা জামাল, অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের মহাপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান। SHARES জাতীয় বিষয়: