ইরান তৈরি করল নিজস্ব কার্গো বিমান, ১৫ বছর পর সফলতা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৫

ইরান সম্প্রতি ১৫ বছরের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার sonunda নিজস্ব কার্গো বিমান নির্মাণে সফলতা অর্জন করেছে। এই অর্জন দেশটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক কূটনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সাফল্য, যা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশটির বিমান শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইরান তাদের নিজস্বভাবে তৈরি কার্গো বিমান ‘সিমোর্গ’ এর আনুষ্ঠানিক পরীক্ষামূলক ফ্লাইট শুরু করেছে। এই বিমানটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও, শিগগিরই দেশের কার্গো বিমান বহরে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষা করছে।

গত মঙ্গলবার, ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর শাহিনশাহর এয়ারফিল্ডে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে, দেশের প্রতিরক্ষা ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ‘সিমোর্গ’ এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা জানিয়েছে, এই বিমানটি দেশের বহরে সম্পূর্ণভাবে যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মোট ১০০ ঘণ্টার পরীক্ষা সফলভাবে পাস করে নেওয়া দরকার।

প্রেস টিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এয়ারক্রাফটের প্রধান হোসেইন পুরফরজানেহ জানিয়েছেন, এই বিমানটির দেশীয়করণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে এতটা সময় লেগেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইরান বিশ্বের অনেক কম দেশে বিমান ডিজাইন ও নির্মাণে সক্ষমতা অর্জন করেছে।

‘সিমোর্গ’ এর নামকরণ হয়েছে ফার্সি পুরাণে বর্ণিত কিংবদন্তি পাখির নাম থেকে, যা উচ্চতায় উড়ে যাওয়ার জন্য পরিচিত। এই বিমানটির দুটি হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন রয়েছে, যার প্রতিটি শক্তি ২,৫০৮ হার্জ। এটি ৬ টন পর্যন্ত কার্গো বহন করতে সক্ষম এবং ৩,৯০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত যাত্রা করতে পারে। এর সর্বোচ্চ ওজন উড্ডয়নযোগ্যতা ২১.৫ টন।

২০২২ সালের মে মাসে, ‘সিমোর্গ’ প্রথম দ্রুত-ট্যাক্সি পরীক্ষা সম্পন্ন করে, যা তার প্রথম উড়ানের এক বছর আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর পর থেকে নির্মাণের কাজ বাড়তে থাকে এবং এখন বিমানটি মানসম্পন্ন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষার শংসাপত্র অর্জনের জন্য কাজ করছে, যাতে বিমানটির উড়ন্ত সক্ষমতা নিশ্চিত হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘সিমোর্গ’ হলো ইরান-১৪০ এর একটি উন্নত ও সংশোধিত সংস্করণ, যা মূলত অ্যান্টোনভ এএন-১৪০ এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি। তবে, কিছু পুরনো কর্মকর্তা বলছেন এটি স্বতন্ত্র প্রকল্প। অনেকের মতে, এতে ব্যবহৃত ইঞ্জিন ও ফিউসেলেজের আধুনিকীকরণ এই বিমানটিকে আলাদা করে তোলে।

এটি দ্রুত, হালকা ও উচ্চ কার্গো বহনক্ষমতাসম্পন্ন বলে পরিচিত, যা ইরানের বিভিন্ন আবহাওয়া পরিস্থিতির জন্য উপযুক্ত। বিশেষ করে জরুরি মেডিকেল ফ্লাইট ও মানবিক সেবার জন্য এটিকে অত্যন্ত দরকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অধিকর্তারা জানিয়েছেন, ‘সিমোর্গ’ দেশীয় শক্তি বাড়াতে ও দেশের স্থল-নৌবাহিনীকে সেনা ও সরঞ্জাম দ্রুত স্থানান্তরে কাজে লাগবে। ভবিষ্যতে, তারা মনে করছেন, এই বিমান দেশের স্বল্প-দূরত্বের যাত্রী পরিবহণব্যবস্থাতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

চলতি সময়ের মধ্যে, ইরানের বিমান শিল্পের এই অগ্রগতি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে, কারণ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের বিমান ও এর উপকরণের আমদানি অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। এরপরেও তারা প্রযুক্তিগত স্বয়ংসম্পূর্ণতার এই অঙ্গীকারে অটুট থাকায় বিশ্বের নজর কেড়েছে।