ঐকমত্য কমিশন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: মির্জা ফখরুল

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৫

জুলাই সনের বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ না থাকাকে কেন্দ্র করে বঙ্গোপসাগরীয় ঐকমত্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এই সুপারিশে যারা বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছিলেন, তার স্বাক্ষর বা নোট অব ডিসেন্টকে সম্পূর্ণ দুর্বল করে তারা উপেক্ষা করে দিয়েছেন। এর ফলে, ঐক্য প্রতিষ্ঠার নামকরণও শুধু মুখে বলার মতো হয়ে গেছে। এত বড় প্রকল্পের জন্য দরকার ছিল সত্যিকার অর্থে সব দলের মতামত সহানুভূতি ও সম্মতি, যা এই সুপারিশে দেখা যায় না। তিনি অবিলম্বে এর সংশোধনের দাবি জানান।

মির্জা ফখরুল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এহসান মাহমুদ এর লেখা ‘বিচার সংস্কার নির্বাচন: অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশ’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এত বড় দুর্যোগে আমরা একত্রে কাজ করার বদলে বিভক্তির পথে হাঁটছি, যা দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও মিডিয়ায় বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের প্রচেষ্টা বেড়ে গেছে। বিভাজন deeper হচ্ছে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সেই পরিকল্পনায় অনেক কিছুতে তারা একমত হলেও কিছু স্থানে নোট অব ডিসেন্ট বা মতভিন্নতা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু স্বয়ং সুপারিশে সেই মতভিন্নতাগুলো সবাইকে অজানা করে দেওয়া হয়েছে, যা আদর্শিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। তিনি এটাকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগে ভ্রান্তির ছড়াছড়ি। তিনি মনে করেন, এই সময়টায় ঐক্যনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রয়োজন, যেখানে সবাই ন্যূনতম বিষয়েও একমত হতে পারে।

বিএনপি নেতা বলেন, দেশের মূল সংকটের মূল কারণ হলো গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তিনি বলেন, সত্যিকার ঐ নির্বাচন দিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন হলে দেশের সমস্যা সমাধান সম্ভব। ৫ আগস্টের পর থেকে যদি দ্রুত নির্বাচন হয়, তাহলে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠা যাবে বলে তারা মনে করেন। তিনি আরও বলেন, যারা বাংলাদেশকে অস্থির করে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত, তারা এ পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে চায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের টেকনিক্যাল কিছু সংস্কার দরকার, যাতে জনগণের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা পায়। তিনি সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিনা বাধায় সত্যিকার সংস্কার করে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। এই নির্বাচনের দিকে চলে গেলে দেশের সংকট কমবে এবং নতুন পার্লামেন্টের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। অন্যথায়, এ ব্যবস্থার ব্যত্যয় বা ভিন্নমত থাকলে তার জন্য দায়িত্ব হবে সংশ্লিষ্ট সরকারের।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ না থাকাকে কেন্দ্র করে মনে হচ্ছে, পাকিস্তানি মডেলে ঐকমত্যের অঙ্গীকার তো দূরের কথা, কেউ কেউ মানতেই চান না। এটা নিশ্চিত করতে হবে, যে দল বা পক্ষ একটি স্থানে সঙ্গতিপূর্ণ মত প্রকাশ করেছেন, সেটিই চূড়ান্ত। পুরনো ঘোষণায় যদি কোনও ভিন্ন মত বা আপত্তি থাকে, সেটি অবশ্যই দলগুলোর নিজস্ব ইশতেহারে থাকতে হবে।” তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার আদেশের ক্ষমতা সম্পর্কেও প্রশ্ন তৈরি হয়। প্রধান উপদেষ্টা কোনও নির্দেশনা দেন, সেটি সরকারের নির্দেশপত্র বা রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়াই কার্যকর হওয়া অসম্ভব। এই ধরনের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া সংবিধান লঙ্ঘন এবং অগণতান্ত্রিক। তাই, সব সিদ্ধান্তের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।”

প্রকাশনা উৎসবে আরও বক্তব্য দেন চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, লেখক ও সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী।