১৬ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হচ্ছে অবৈধ মোবাইল সেট, নেটওয়ার্কে যোগাবে না সেগুলো

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৫

আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশের সকল অবৈধ বা আনঅফিশিয়াল মোবাইল হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধ হবে। সে দিন থেকেই কার্যকর হবে জাতীয় পর্যায়ের ‘ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর)’ সিস্টেম, যার মাধ্যমে দেশের সব বৈধ মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরের তথ্য কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজে যুক্ত হবে। এর ফলে, কাগজপত্রবিহীন আমদানি বা বিদেশ থেকে আনা ও উপহার হিসেবে দেয়া মোবাইল ফোনগুলো বাংলাদেশে নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে না। বৈধতার জন্য এই সব ফোনের নিবন্ধন করতেই হবে বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, ১৬ ডিসেম্বরের পর নতুন কোন হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হলে প্রথমে অস্থায়ীভাবে সক্রিয় থাকবে। এরপর এনইআইআর সিস্টেমের মাধ্যমে তার বৈধতা পরীক্ষা করা হবে। যদি ফোনটি বৈধ হয়, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে। আর অবৈধ ফোন এক মাসের মধ্যে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। তবে বর্তমানে নেটওয়ার্কে সচল সব বৈধ ও অবৈধ হ্যান্ডসেটই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে।

বিটিআরসি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে চোরাই ও আনঅফিশিয়াল পথে আমদানিকৃত মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এর কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, পাশাপাশি অপরাধীরা এই ফোনগুলো ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এড়িয়ে যেতে পারছেন। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য এবং নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এনইআইআর সিস্টেম চালু করা জরুরি বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক বলেন, “এই সিস্টেমের মাধ্যমে অবৈধ ও চোরাই মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ হবে। একই সঙ্গে দেশের মোবাইল শিল্পের সুরক্ষা ও সরকারের রাজস্ব হারানো রোধ করা সম্ভব হবে। অ্যাপ্লিকেশন বা অপারেটরদের মাধ্যমে এই নিবন্ধন সহজে ও দ্রুত করা যাবে।

আর কিভাবে জানবেন আপনার ফোনটি বৈধ কিনা—তার জন্য রয়েছে তিন ধাপের পদ্ধতি:
1. *১৬১৬১# ডায়াল করুন।
2. আপনার ফোনের ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে পাঠান।
3. ফিরতি এসএমএসে জানানো হবে আপনার ফোনের নিবন্ধন অবস্থা। এছাড়াও, neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি নিজের মোবাইলের বৈধতা চেক করতে পারেন।

বিদেশ থেকে আনা মোবাইল ফোনের নিবন্ধনের নিয়ম হচ্ছে, ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইনে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। এ জন্য গ্রাহকদের neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘স্মার্ট রেজিস্ট্রেশন’ অপশনে আইএমইআই নম্বর, পাসপোর্ট বা ভিসা, ক্রয় রশিদ বা কাস্টমস কাগজপত্র আপলোড করতে হবে।

এছাড়া, নতুন ফোন কেনার আগে ব্যবহারকারীরা সহজে যাচাই করতে পারবেন। মোবাইলের মেসেজ অপশনে লিখতে হবে—KYD <স্পেস> 15 ডিজিটের আইএমইআই নম্বর এবং পাঠাতে হবে ১৬০০২ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে জানানো হবে ফোনটি বৈধ কিনা, এবং বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

নতুন সিস্টেমের মাধ্যমে চুরি বা হারানো ফোন দ্রুত ব্লক ও আনলক করা যাবে। এজন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে; যেমন ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ, অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার অথবা *USSD চ্যানেল (১৬১৬১#)। এমনকি ইন্টারনেট না থাকলেও ১২১ নম্বরে কল করে সেবা নেয়া সম্ভব।

অপরদিকে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি প্রতিরোধ সম্ভব হবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেস্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, “অবৈধ মোবাইলের ব্যবহার বন্ধের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এনইআইআর চালু দিয়ে এই ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে।” তিনি আরও বলেছিলেন, “২০২৪ সালে দেশের ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল জালিয়াতি অবৈধ ডিভাইস ও সিম ব্যবহার করে সংঘটিত হয়েছে। এই সিস্টেম চালু হলে প্রতারণা ও সাইবার অপরাধ কমে আসবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এ. এমদাদ উল বারী বলেন, “এনইআইআর চালু হলে দেশীয় ১৮টি মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। এ ছাড়া, বর্তমানে ৩৮ শতাংশ মানুষ ফিচার ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্মার্টফোনে রূপান্তর করবে, যাতে দেশের ডিজিটাল অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়।” এই নতুন প্রযুক্তি এই খাতে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে বলে মানছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি দেশের মোবাইল শিল্প, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং মোট উপার্জনে বহুমাত্রিক উন্নয়ন এনে দেবে।