দেশের শেষ ভরসাস্থল সেনাবাহিনীকে বিতর্কে টানবেন না Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২৫ বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কেবল একটি সশস্ত্র বাহিনী নয়, এটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতির অস্তিত্বের শেষ প্রহর। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংকটের সময় সেনাবাহিনীই ছিল জনগণের নির্ভরতার প্রধান অবলম্বন। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনীতির কলুষিত পরিবেশে এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থের জন্য ব্যবহার করার অপচেষ্টা বেড়েছে। যদি কেউ সেনাবাহিনীকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে, সেটি কেবল বাহিনীর মর্যাদাকেই কমিয়ে দেয় না, বরং দেশের মূল ভিত্তি- রাষ্ট্রের মেরুদণ্ডকেও ভেঙে দেয়। সেনাবাহিনীর মর্যাদা দেশের সম্মানের প্রতীক। ২০২৪ সালে কয়েকটি আন্দোলন প্রমাণ করেছে—যখন সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়ায়, তখন ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তিত হয়। আর যখন রাজনৈতিক স্বার্থে এই বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়, তখন দেশ রক্তাক্ত হয়। অতএব, নতুন বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় দায়িত্ব হলো সেনাবাহিনীকে বিতর্কের উর্ধ্বে রাখা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তারা দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য অবিচল, কিন্তু নিয়মিত রাজনৈতিক প্রভাবের মধ্যে পড়ে যাওয়া ছিল একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা। গত দুই দশকে ক্ষমতার লালসায় কিছু সরকার এই বাহিনীকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। পদোন্নতি, নিয়োগ, বাজেট সব ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে বাহিনীর নৈতিকতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে বিপজ্জনক। দেশটির স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য জাতীয় নৈতিকতা নিশ্চিত করা আবশ্যক, এবং এটি শুধুমাত্র বাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখলে সম্ভব। সেনাবাহিনী যদি দলীয় হয়, তবে জনমত ও আস্থা কমে যায়, রাষ্ট্রের ভারসাম্য নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এই জন্য যারা রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের মনে রাখা উচিত—সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা রাখাই হচ্ছে রাষ্ট্রের মূল অস্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা। জুলাই ২০২৪ সরকারের বিরুদ্ধে সকলের অংশগ্রহণের মধ্যে আলোচনায় আসে, যখন মুহূর্তে সেনাবাহিনী তাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা দেখিয়ে জনগণের উপর গুলি চালায়নি। তারা বুঝেছিল—এটি কেবল ক্ষমতা কেন্দ্রের লড়াই নয়, এটি মানুষের ন্যায়ের লড়াই। দীর্ঘ আলোচনা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় সেনা কর্তৃাকরা সিদ্ধান্ত নেয়—জনগণের মুখোমুখি হবে না। এই সিদ্ধান্ত মোড় ঘুরিয়ে দেয় দেশের ইতিহাস। যদি সেনারা তখন সরকারের নির্দেশে গুলি চালাত, তাহলে দেশ গড়ে তোলার অবস্থা হতো অস্থিতিশীল। কিন্তু তারা নীরবতা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে দেশের জন্য প্রেরণা সৃষ্টি করে। এই নীরব বিপ্লব জাতিকে রক্ষা করেছে, প্রমাণ করেছে—একজন পেশাদার সেনাবাহিনী কখনোই জনতার শত্রু নয়। এই সময়ে ঢাকার রাস্তায় লাখো মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল, তখন সেনাবাহিনীর সদর দফতর থেকে ঐতিহাসিক নির্দেশ আসে—‘জনগণের ওপর গুলি নয়।’ এটি কেবল একটি কৌশল নয়, এটি ছিল এক গভীর নৈতিক অবস্থান। সেনাবাহিনী জানত—রক্তপাতে রাষ্ট্রের মৃত্যু হবে। তাই তারা জনগণের পাশে দাঁড়ায়, অস্ত্র নয়, বিবেক দিয়ে। এই সিদ্ধান্তের ফলে জনগণের আস্থা বেড়ে যায় ও আন্দোলন জয়ী হয়। বিশ্ব মিডিয়া স্বীকার করে—বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়েছে। এই দিনটি শুধু সরকারের পতনের নয়, সেনাবাহিনী ও দেশের নৈতিক অবস্থানেরও নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সেনাবাহিনী কেবল রাজনীতি নয়, এটি দেশের মনোবল ও সাহসও। যখন এ বিষয়ে বিষোদ্গার হয়, তখন জাতির আস্থা কমিয়ে দেয়। কারণ জনগণ জানে—দুর্যোগ, মহামারি বা সীমান্ত সমস্যা দ্রুততম সময়ে যেই বাহিনী এগিয়ে আসে, তারা হলো সেনাবাহিনী। রাজনৈতিক স্বার্থে সেনাবাহিনীর চরিত্রকে প্রশ্নের মুখে ফেলা মানে জনগণকে বিভ্রান্ত করা। সেনাবাহিনীটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হলে আস্থা কমে যায়, দেশীয় অবকাঠামো দুর্বল হয়। এই জন্য দলীয় বিতর্ক শুধু রাজনৈতিক অন্যায়ই নয়, এটি রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ। সেনাবাহিনীকে বিতর্কের জায়গা করে দিলে, জনগণের মনে ‘শেষ আশ্রয়’ হারিয়ে যায়। দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সামরিক বাহিনীর এই নৈতিক মূল্যবোধ রক্ষা করা অপরিহার্য। বিশ্বজুড়ে যেখানে সেনাবাহিনী প্রায়শই দমনমূলক শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, সেখানে বাংলাদেশ দেখিয়েছে—সঠিক নীতিতে অটল থাকলে বাহিনী হয় জনগণের আশ্রয়। দুর্যোগ-প্রতিরোধ, মহামারি মোকাবিলা কিংবা সন্ত্রাস দমন—প্রতিটি সংকটে তারা নেতৃত্ব দেয়। বন্যার সময় ত্রাণ বিতরণ, ভূমিকম্পে উদ্ধার কার্যক্রম, করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবা—এসবের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করে, তারা কেবল সৈনিক নয়, মানুষের মানবিক হাত। বাহিনীকে রাজনীতির অঙ্গীকারে জড়ানো মানে দুর্যোগে জনগণের আশ্রয়কে দুর্বল করা। দেশের দুর্যোগে কাণ্ডারীকে বিভ্রান্ত করা, তা ভুল বোঝার নামান্তর। সবার দ 책임 সেনাবাহিনীকে দলীয় রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা। পরিবর্তনের টানাধরা চালু থাকলেও, সেনাবাহিনীর অঙ্গীকার অটুট থাকা উচিত—দেশের, জনগণের ও ন্যায়ের। যেখানে সেনাবাহিনীকে রাজনীতির অংশ করে নেওয়া হয়, সেখানেই দেশের অস্তিত্বের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এই জন্য সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী রাখতে না হয়, তার নীতির দৃঢ়তা জরুরি। আস্থা হারালে দেশের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে, ইতিহাস প্রমাণ করে—এ রকম অজস্র উদাহরণ। ফলে, সেনাবাহিনীকে দেশের শেষ নৈতিক দুর্গ হিসেবে রক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক খেলায় সেনাবাহিনীকে নামানো, একথা জাতীয় স্বার্থের স্বর্ণশৃঙ্খলে পরিণত হয়। বাংলাদেশে নানা সংকটে যখন আঞ্চলিক বা দলীয় স্বার্থে সেনাবাহিনীকে হুমকি দেয়া হয়, সেটি অপ্রতীত বিপদ। এই মানসিকতা মারাত্মক, কারণ একবার এই সীমারেখা অতিক্রম হলে পুনরুদ্ধার অসম্ভব হয়ে যায়। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত—অভ্যাস পাল্টানো, সেনাবাহিনীকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে। দেশের স্বার্থে এই সম্পর্ক অম্লান রাখতে সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে। জনগণের সঙ্গেই সেনাবাহিনীর সম্পর্ক—এই তাদের মূল শক্তি। যারা সেনাবাহিনীকে জনগণের ভালোবাসা পায়, তারা কখনো পরাজিত হয় না। বাংলাদেশের সেনারা ১৯৭১ সালে যেমন জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তেমনি ২০২৪ সালে তাদের দায়িত্ববোধের নজির দেখিয়েছে। যদি সেনাবাহিনী নিজেদের অস্তিত্বকে মনে করে জনগণের নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে জড়িত, কোনো ষড়যন্ত্র অন্তর থেকে টলাতে পারবে না। মানুষের মনে সেনাবাহিনীর আস্থা আজও অটুট, সেটিই দেশের আসল প্রতিরক্ষা ঢাল। এই আস্থা রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় কর্তব্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে সেনাবাহিনী প্রায়শই দমনকামী শক্তি হিসেবে দেখা হয়, সেখানে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে—সঠিক নীতির বাহিনী জনগণের আশ্রয় হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাস দমন বা মহামারি মোকাবিলা—প্রতিটি সংকটে তারা এগিয়ে আসে। বন্যায় ত্রাণ, ভূমিকম্পে উদ্ধার, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা—এসবের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করে, তারা কেবল সৈনিক নয়, জাতির মানবিক হাত। বাহিনীকে রাজনীতির অঙ্গীকারে জড়ানো মানে দুর্যোগে জনগণের আশ্রয়কে দুর্বল করা। এটা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। প্রত্যেকের দায়িত্ব—the দেশ, জনগণ, ও নৈতিকতার স্বার্থে—সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ দলহীন, স্বচ্ছ ও পেশাদার রাখতে হবে। পরিবর্তন আসবে, মতামত বদলাবে, কিন্তু সেনাবাহিনীর স্বকীয়তা অটুট থাকাটা জরুরি—রাষ্ট্রের, দেশের ও জাতির স্বার্থে। যেখানে সেনাবাহিনীকে রাজনীতির অঙ্গীকার করে দেওয়া হয়, সেখানেই দেশের ভবিষ্যৎ বিপন্ন। সেনাবাহিনীর নৈতিক শক্তি ও পেশাদারিত্বই দেশের আসল প্রতিরক্ষা। দেশের স্বার্থে, দেশের সম্মান বজায় রাখতে হলে সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতেই হবে। কারণ, জনগণের বিশ্বাস হারালে দেশ দুর্বল হয়ে পড়ে, আর নির্ভরযোগ্যতা হারালে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আজকের দিনক্ষণে আমরা সবাই যদি একসাথে এই সচেতনতা অর্জন করি, তাহলেই বন্ধু, বিভাজন ও বিভ্রান্তি এড়ানো সম্ভব। এই দেশ আরও শক্তিশালী, আরও সুন্দর হয়ে উঠবে, এমন প্রত্যাশাই আমাদের সকলের। SHARES সারাদেশ বিষয়: