জয়পুরহাটে চার লেন সড়কের উদ্বোধনে যানজট কমে, শহর যেন স্বস্তির হাসি Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২৫ দীর্ঘ অপেক্ষার পর জয়পুরহাট শহরের হাড়াইল থেকে রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে চার লেন সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে শহরের প্রধান সড়কের কিছু অংশে যানজট অনেকটাই কমে গেছে, যা শহরবাসীর মধ্যে স্বস্তির নাড়ি জাগিয়েছে। তবে, নতুন এই সড়কটি নিয়ে কিছু দুর্বলতা থাকায় এখন ঐতিহ্যবাহী পার্কিং সমস্যা দেখা দিয়েছে, যার কারণে শহর অনেকটাই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। পরিবেশ সচেতন শহরবাসীর প্রত্যাশা, পরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা ও নিয়মিত পার্কিং ব্যবস্থাপনা চালু হলে এই সড়ক প্রকল্প পুরোপুরি সফলতা পাবে।সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, জয়পুরহাট শহরের হাড়াইল থেকে রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, পানির লাইন, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের লাইন স্থানান্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে মোট ১০৪ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৫৮৯ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি ২০ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮০ টাকা। এছাড়াও, সড়কের দুই পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নালার নির্মাণে ৩০ কোটি টাকা ও সড়ক প্রশস্তকরণে ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। নকশা অনুযায়ী, এই সড়কটির প্রস্থ হবে ৬০ ফুট, এক পাশে ২৪ ফুট, অন্য পাশে ২৪ ফুট এবং মাঝখানে থাকবে ৪ ফুট প্রশস্ত ডিভাইডার। এছাড়াও, সড়কের দুই পাশে ড্রেনসহ ৫ থেকে ৯ ফুট প্রশস্ত ফুটপাত থাকছে।প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর স্থাপন করা হয়। তবে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দুই দফায় কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরও চুক্তি মোতাবেক কাজ সম্পন্ন করেনি, ফলে সড়ক বিভাগ সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল। এরপর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নাভানা কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে। নতুন দরপত্রে নালার নির্মাণে নওগাঁর আমিনুল হক লিমিটেড এবং চার লেন সড়কের জন্য জয়েন ভেঞ্চার রিলায়েন্স বিল্ডার্স লিমিটেড ও হাসান টেকনো নির্বাচিত হয়। এই নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ২০২২ সালের জুলাই মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছর শুরুর দিকে, নানা বিষয়জনিত কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও পরে আবার শুরু হয় এবং এখন পুরো কাজ শেষ হয়েছে।শহরের আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এই চার লেন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, পাটুর মোড় থেকে আমতলী পর্যন্ত যানজটের প্রবণ এলাকায় সরু ও স্বচ্ছন্দে চলাচল করছে যানবাহন। তবে, এই এলাকার সড়কের দুই পাশে যত্রতত্র পার্কিং হওয়ার কারণে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ডিভাইডারগুলিতে গাছ লাগানোর বিষয়টি নিয়মবহির্ভুত হলেও, কিছু শ্রমিক ঘাসের পরিচর্যা করছেন। রেলগেটের পশ্চিমাংশে আগের মতোই যানজট অব্যাহত রয়েছে, কারণ সেই অংশে চার লেন সড়ক নির্মাণের কাজ এখনও হয়নি।ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালক আপেল মাহমুদ শান্ত জানান, আগে এই সড়কে যানজট ছিল তীব্র, কিন্তু এখন এক পাশে যানবাহন আসে, অন্য পাশে চলে যায়, ফলে যানজট কমে গেছে। তবে পার্কিংের জন্য নেই যথাযথ ব্যবস্থা, অন্যথায় সমস্যা আরও কমে যাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শহরের ব্যবসায়ী মো. আল-আমিন বলেন, সড়কটি এখন অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে, কিন্তু দুঃখের বিষয়, দোকানের সামনে অনেকে গাড়ি পার্কিং করে রাখায় আবার যানজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, পৌরসভা যদি নিয়মতান্ত্রিক পার্কিং ব্যবস্থা চালু করে দেয়, তবে এই সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, রেলগেট থেকে হাড়াইল পর্যন্ত চার লেনের এই সড়ক নির্মাণ সফল হয়েছে, তবে হাঁড়াইলের অপ্রয়োজনীয় পার্কিং ও যাত্রা ব্যবস্থা বন্ধ হলে যানজটের প্রবঞ্চনা আরও কমে যাবে। তিনি আরও বলেন, রেলগেটের পশ্চিম অংশে এখনও চার লেনের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি, তাই এখনও যানজট অব্যাহত রয়েছে। শহরের অন্যান্য অংশগুলো দ্রুত চার লেনের আওতায় আসা দরকার বলে তিনি দাবি জানান।অভিজ্ঞ সড়ক বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী খান জানান, তাদের পক্ষ থেকে ডিভাইডারে গাছ রোপন করা হয়নি, বরং লোকজন নিজের মতো করে গাছ রোপন করেছেন। অন্যদিকে, জয়পুরহাটের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাজস খান বলেন, চার লেন চালু হওয়ার পর শহরে যানজট অনেকটাই কমে গেছে। তিনি আরো যোগ করেন, শহরে যানবাহনের পার্কিং সমস্যা সমাধানে তারা সচেষ্ট থাকছেন। সম্পূর্ণভাবে যানজট দূর করতে সড়ক বিভাগ পুরোপুরি মনোযোগী। SHARES সারাদেশ বিষয়: