নওগাঁর সরকারি মৎস্য খামারে রেনুর চাহিদা বাড়ছে, তবে উৎপাদন ব্যাহত

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০২৫

নওগাঁ জেলায় সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে উন্নত মানের রেনু সরবরাহের কারণে মাছ চাষিদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তবে চাহিদা থাকলেও এই খামার থেকে পর্যাপ্ত রেনু উৎপাদন না হওয়ায় চাষিরা বেশ সমস্যায় পড়েছেন। অধিকাংশ মাছ চাষি এখন বেসরকারি খামার থেকে বেশি দামে রেনু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাঁদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে 부담 sj। এগিয়ে আসা হলে উপকরণ ও জনশক্তি বৃদ্ধি করে এই পরিস্থিতি বদলে আনা সম্ভব, যাতে সরকারি আয়ে সাথেসঙ্গে মাছ চাষিরা লাভবান ও উপকৃত হবেন।

নওগাঁ একটি কৃষি সমৃদ্ধ জেলা হলেও মৎস্য ক্ষেত্রেও এই জেলার অগ্রসরতা লক্ষ্য করণীয়। সরকারি খামার থেকে উন্নত মানের রেনু সরবরাহের মাধ্যমে মাছ চাষে নানা সুবিধা মিলছে। তবে এর মানোন্নয়ন ও উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের মোট মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এভাবেই বিশ্বের খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রোটিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে যাত্রা করে যাবে এই খামার।

অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০০ কেজি রেনু, যা থেকে আয় হবে প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে বিগত অর্থবছরগুলোতে এই খামার থেকে অর্জিত আয় সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩৭ কেজি রেনু উৎপাদন করে ৭ লাখ ৯ হাজার টাকা আয় হয়, আর ২০২৩-২৪ সালে ১২২ কেজি রেনু থেকে আয় হয়েছে ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা।

নওগাঁ শহরের আরজি-নওগাঁয় অবস্থিত এই সরকারি খামারটি প্রায় ১১ একরের বিস্তৃত জমিতে নিয়ে গঠিত। এখানকার চার কোটিরও বেশি জায়গায় ১০টি পুকুরে কার্প জাতীয় মাছের বিভিন্ন প্রজাতির পোনা উৎপাদন হয়, যার মধ্যে রয়েছে রুই, মৃগেল, কাতলা, কালবাউস ও পাঙাশ। এই সব পুকুর থেকে উৎপাদিত উন্নত মানের রেনু সরাসরি মাছ চাষিদের কাছে সরবরাহ করা হয়। একদিকে জাল বেঁধে রেনু উৎপাদনের মৌসুমে, অন্যদিকে চাহিদার অভাবে এই খামার থেকে রেনু কম উৎপাদিত হয়, ফলে স্থানীয় চাষিরা অধিক দামে অন্য খামার থেকে কিনতে বাধ্য হন।

জেলাজুড়ে ৩১টি বেসরকারি হ্যাচারিসহ অন্যান্য প্রতিষ্টান রয়েছে, যেখানে মোটামুটি ১৩ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় রেনু উৎপাদন হয়। এই রেনু লেকের চাহিদা পূরণ করে পাশের জেলার বাজারগুলোতেও সরবরাহ করা হয়।

মৎস্য বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এরা উদাহরণস্বরূপ মাছের অণু ও পোনা সরবরাহের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে। মাছ চাষিরা জানান, সরকারি খামার থেকে উৎপাদিত রেনুর দাম তুলনামূলক কম এবং মানও ভালো। তবে চাহিদা পূরণের জন্য তাদের অধিকাংশ সময়ই বেসরকারি খামার থেকে আরও বেশি মূল্যে রেনু কিনতে হয়, যা তাদের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা।

চকআবড়শ গ্রামের মাছচাষি মীর বকস বলেন, ‘সরকারি খামারের রেনু গুণগত মানে অনেক ভালো। এ রেনু থেকে মাছ বড়ো ও সুস্থ হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। এতে আমার লাভ বেশি।’

হ্যাচারি টেকনিশিয়ান ইমরান হোসেন বললেন, ‘এই খামারে পাঁজনের সংখ্যা কম থাকায় উৎপাদন কিছু ব্যাহত হচ্ছে। জনবল ও উপকরণ বাড়ালে আরও বেশি রেনু উৎপাদন হবে এবং রাজস্ব বাড়বে।’

খামার ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো উচ্চ মানের রেনু ও পোনা উৎপাদন করা, চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। গবেষণার মাধ্যমে নতুন জাতের রেনু সরবরাহ হলে উৎপাদন আরও বাড়বে।’

মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, ভালো মা-মাছ থাকলে ভালো মানের রেনু পাওয়া যায়। সরকারি ও বেসরকারি খামার মিলে মাছের সম্পদ উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এই উদ্যোগে মাছের চাহিদা মেটাতে ও কৃষকদের লাভবান করতে এগিয়ে আসছে। দীর্ঘ মেয়াদে, এই খামার দেশের মৎস্য উৎপাদন ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।