বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সিইপিএ চুক্তি চূড়ান্তের পথে

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২৫

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। দুই দেশের মধ্যে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) চুক্তি দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত বুধবার সিউলে, যেখানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়ো হান-কু অংশ নেন। বৈঠকে দুই পক্ষই এই চুক্তিকে সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকার করেন। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, এই চুক্তি বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রাক্কালে নতুন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা আরও সুসংহত হবে। আশিক চৌধুরী বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের উপর দীর্ঘদিন ধরেই আস্থা ও উন্নয়ন সহযোগিতা প্রদান করছে। আমরা চাই এই সিইপিএ দ্রুত চূড়ান্ত হয়ে আসুক। চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে ইলেকট্রনিক্স, মোবিলিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেক্সটাইল ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে কোরিয়ান বিনিয়োগ বহুগুণ বাড়বে।’ তিনি আরও জানান, কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসে তারা শুল্ক, রেমিট্যান্স ও করসংক্রান্ত বিষয়গুলোকে আরও সহজ, দ্রুত ও আধুনিক করে তোলার জন্য কাজ করছেন। এর জন্য বিডা ৩২ দফা ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট রিফর্ম এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে অগ্রसरChapঢ করছে, যা প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এগুচ্ছে। উদীয়মান এই সফলতার প্রসঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়ো হান-কু বলেন, ‘বাংলাদেশ দ্রুত এগুচ্ছে এবং এর আধুনিক উৎপাদন ও সেবা খাতে অগ্রগতি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা এই উন্নয়নের অংশীদার হতে আগ্রহী।’ তিনি অতীতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা বরাবরই উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে আমার কয়েকবার সফর হয়েছে এবং এখানকার অগ্রগতি আমি নিবিরভাবে দেখেছি। সেই কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে আরও গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বিশেষ করে বাংলাদেশে কোরিয়ান ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই কোরিয়ান ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল আসুক, দেখুক কীভাবে অবকাঠামো, ডিজিটাল সার্ভিস ও ব্যবসা সংস্কারে পরিবর্তন আনা হয়েছে।’ উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ প্রায় ১.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে ১৫০টির বেশি কোরিয়ান কোম্পানি কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়া এখন বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনসিটাড) ২০২৫ সালের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে কোরিয়ার বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের শীর্ষ ১০ বিনিয়োগকারী দেশের তালিকায় নিয়ে এসেছে। আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করবে, যেখানে তারা ‘গেটওয়ে টু গ্রোথ: ইনভেস্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক বিনিয়োগ সেমিনারে অংশ নিয়েছেন। এই সময় তারা কোরিয়ার শীর্ষ শিল্প গোষ্ঠীর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি একাধিক বৈঠকও করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করবে।