বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুহি আখতার গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠাতে যোগ দিয়েছেন

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২৫

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অধিকারকর্মী রুহি লরেন আখতার দীর্ঘদিন ধরে শরণার্থী ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তার কাজ করে আসছেন। তার পরিচালিত সংস্থা ‘রিফিউজি বিরিয়ানি অ্যান্ড ব্যানানাস’ (আরবিবি) মূলত বাস্তুচ্যুত এবং যুদ্ধপ্রভাবিত মানুষের জন্য খাদ্য ও ত্রাণ বিতরণসহ নানা সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে।近期 তিনি গাজার জন্য যাত্রা করা মানবিক ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি ভয়কে উপেক্ষা করে মানবতার বার্তা পৌঁছানোর কঠিন কাজে অংশ নিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু পোস্টে দেখা গেছে, রুহি আখতার ফ্লোটিলায় যোগ দিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন এবং গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাদের মূল লক্ষ্য হলো নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে মানবতার সেবা পৌঁছে দেওয়া। এখন সারাবিশ্বের নজর এই নৌবহরের দিকে নিবদ্ধ, যা ফিলিস্তিনের গাজার মানুষের জন্য জরুরি সহায়তা বহন করছে।
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র ৪০টির মধ্যে অন্তত ২৪টি নৌযান এই সময় গাজার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ফ্লোটিলার ট্র্যাকার অনুযায়ী, এখনও এসব জাহাজ নির্বিঘ্নে ইসরায়েলি সৈন্যের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে যাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই ‘মিকেনো’ নামের একটি জাহাজ গাজার আঞ্চলিক জলসীমায় প্রবেশ করেছে। রুহি আখতার ও তার সহযাত্রীরা ভয়কে উপেক্ষা করে মানবতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অটল থাকছেন।
রুহি আখতার এর পিতা কাপ্তান মিয়া, একজন প্রবাসী বাংলাদেশি। তিনি যুক্তরাজ্যের মরপেথে থাকেন। নিজে জন্মগ্রহণ করেন এলসউইক ওয়ার্ডে এবং বর্তমানে একজন মানবিক সহায়তা কর্মী ও অধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। গাজার মানুষদের জন্য জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি চলমান ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তিনি এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
১৮ সেপ্টেম্বর তিনি গামার্থ বন্দর থেকে তিউনিসিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেন। তার নৌকায় বর্তমানে ১২ জন সদস্য রয়েছেন। তারা এই মতান্তরে অংশ নিয়েছেন যাতে বিশ্বে প্রয়োজনীয় মানবিক সাহায্য পৌঁছায়। তাদের নৌযান বিভিন্ন দেশ থেকে চলমান থাকলেও রুহি তার অবদানে স্বীকৃতি পেয়ে থাকেন, ২০২৪ সালে তাকে যুক্তরাজ্যের নর্থ ইস্ট বাংলাদেশি অ্যাওয়ার্ডে ‘পার্সন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
রুহির মতে, ‘গাজার জন্য এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমি নিজের মানবিক দায়িত্ব পালন করতে চাই। অন্যায়ের মুখে নীরব থাকা কোনো সমাধান নয়। ফিলিস্তিনিরা বহু বছর ধরে খাদ্য, পানি, জমি, নিরাপত্তা এবং চলাচলের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। একজন মাননীয় কর্মী হিসেবে আমি দেখেছি, এক টুকরো রুটি বা সামান্য পানি কিভাবে অন্ধকার সময়েও আশার আলো জ্বেলে দেয়। এই নৌবহর হলো সংহতির প্রতীক, যা বিশ্বকে দেখিয়ে দেয় আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। যতদিন না ফিলিস্তিন মুক্ত হয়, ততদিন আমরা তাদের পাশে থাকব।’
প্রথমে এই সংস্থা গাজা ও অন্যান্য এলাকায় বাস্তুচ্যুত ও যুদ্ধবিদ্ধস্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য জরুরি খাদ্য ও সহায়তা বিতরণ করে আসছে। সংস্থা এর সদস্যরা বেশিরভাগই নিজেকে শরণার্থী বলে মনে করেন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছেন, আটক হওয়া নৌযানগুলোতে অন্তত ২০১ জন যাত্রী ছিলেন, যার মধ্যে স্পেন থেকে ৩০ জন, ইতালি থেকে ২২ জন, তুরস্ক থেকে ২১ জন ও মালয়েশিয়া থেকে ১২ জন। গাজা থেকে এ পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরে অবস্থানকালে ইসরায়েলি বাহিনী এই নৌযানগুলোকে বাধা দেয়। তবে, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মোট ১৩টি নৌযানকে আটক করা হয়েছে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা হলো একটি বৈশ্বিক মানবিক উদ্যোগ, যা প্রায় ৫০0 জনের বেশি আমন্ত্রিত সদস্যের মাধ্যমে পরিচালিত। এই বহরে যুক্ত রয়েছে বিভিন্ন দেশের নাগরিক, যারা চিকিৎসক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। তাদের লক্ষ্য হলো সমুদ্রপথে গাজার জন্য সরাসরি সাহায্য পৌঁছে দেওয়া, যা বিশ্বজুড়ে মানবতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত।