ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি: কারা দিচ্ছে, কারা দিচ্ছে না Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫ গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান সংঘাতের মধ্যে এখন অনেক দেশে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ এই স্বীকৃতি দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং পরিস্থিতির পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সোমবার নিউইয়র্কে একযোগে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল। এর মাধ্যমে দেখা গেছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই স্বীকৃতির বাইরে থাকলেও, অন্য চার সদস্য—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া—ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে মান্য করেছেন। এই প্রতিবেদনটি আরও বিস্তারিতভাবে জানাবে কারা এই স্বীকৃতি দিয়েছে, কারা দেয়নি এবং এর এরগাজ্যুৎ বিষয়গুলো। ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর, ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে দেশটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে, এই ঘোষণা থেকে অনেক পরে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েল দখলে থাকায় এবং গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায়, ফিলিস্তিনের অবস্থান কিছুটা বিভ্রান্তিকর হয়ে পড়ে। এরপর থেকে, বিশ্বের অনেক দেশই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি জানিয়েছে। চূড়ান্ত ভাবতে গেলে, জাতিসংঘের প্রায় ৮০ শতাংশ সদস্যই এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং নীতিমালা অনুযায়ী, দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া একটি রাজনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়া, যা সম্পূর্ণরূপে দেশের সিদ্ধান্ত। এর অর্থ, কোন দেশ কখন এবং কীভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে—সেটি তার নিজের স্বাধীন সিদ্ধান্ত। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতীকী স্বীকৃতি আসলে পৃথিবীর আন্তর্জাতিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, কারণ একবার স্বীকৃতি পেয়ে গেলে, তা দেশের আইনি মর্যাদা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, এখনও অন্তত ৩৯টি দেশ এই স্বীকৃতি দিচ্ছে না। এর মধ্যে এশিয়ার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর, আফ্রিকার ক্যামেরুন, লাতিন আমেরিকার পানামা, ওশেনিয়ার কিছু দেশ, এবং ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, এবং তাদের সরকার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ধারণাকেই পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে। আগের তুলনায় এখন ইউরোপের কিছু দেশ আরও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। যেমন, ২০২৪ সালে নরওয়ে, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়া এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তবে ইতালি ও জার্মানি এখনও কোনও ঘোষণা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্বীকৃতির অর্থ কেবল প্রতীকী নয়। আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকে দেখে গেলে, এটি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। ফ্রান্সের এক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক রোমেন লে বোয়েফ বলছেন, ‘ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি সবচেয়ে জটিল আর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির সাথে যুক্ত বিষয়।’ তিনি বলেন, এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট ধারা বা নিয়ম নেই; প্রত্যেকের সিদ্ধান্তই স্বাধীন। এছাড়া, তিনি জানান, স্বীকৃতি মানে এই নয় যে দেশের অস্তিত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বরং এটি একটি রাজনৈতিক ও প্রতীকী চিহ্ন। বিশেষ করে, অনেক দেশের ধারণা, ফিলিস্তিন দেশের জন্য সব শর্ত পূরণ করেছে—এমন ঘোষণা এখন বেশিরভাগ দেশই করে। ব্রিটিশ ও ফরাসি আইনজীবী ও অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডসও বলেন, “একজন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রতীকী হলেও এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একবার স্বীকৃতি মিললে, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে সমমানের হয়ে যায়। সার্বিকভাবে, বলা যায়, বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশের বেশি দেশই মনে করে, ফিলিস্তিন দেশের প্রধান শর্তগুলো পূরণ করেছে। তাই, স্বীকৃতি প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: