চট্টগ্রামে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের পরিকল্পিত উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫

চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত যেখানে নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই এলাকার বিভিন্ন উপজেলায় নিরাপদ পানি, আধুনিক স্যানিটেশন সুবিধা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য নানা কাজ চালানো হয়েছে। এর ফলে জনস্বাস্থ্য ও sanitized জীবনযাত্রার মান ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে, যা মানুষের জীবনমানের যে কোনো দিকেই ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।

বিশেষ করে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগ, নানা উদ্যোগ নিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। জলস্তরের নিচে চলে যাওয়া ও নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পানির অভাব প্রকট হয়ে উঠলেও এই গভীর নলকূপগুলো জনগণের জন্য অনেকটাই ভরসা হয়ে উঠেছে। অতি দরিদ্র ও দুর্বল পানির জন্য সহজলভ্যতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি দূষিত পানি পান করে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে।

সীতাকুন্ড উপজেলায় মাটির নিচে পাথরের স্তর থাকায় পানির সমস্যা বেশ গুরুতর। এই এলাকায় উন্নত প্রযুক্তি hydraulic rig পদ্ধতি ব্যবহার করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে পানির স্বল্পতা কিছুটা লাঘব হয়েছে। এর পাশাপাশি, অন্যান্য উপজেলার জনসাধারণের জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক ওয়াটার সাপ্লাই স্কীম ও গ্রামীণ পাইপড ওয়াটার সিস্টেমের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে অগ্রগতি হয়েছে। এভাবে সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ পানি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।

পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে ৬০০টি ওয়াশব্লক নির্মাণ ও ১,১৩৫টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে, সিটি করপোরেশন এলাকা যেখানে মাটির নিচে পাথুরে স্তর থাকায় গভীর নলকূপ বসানো কঠিন ছিল, সেখানে Hydraulic জরিক ব্যবহার করে এসব কাজ চালানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্কুল কলেজগুলোতে স্যানিটেশন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য এটি বেশ গুরুত্বপূর্ন।

দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন এলাকায় যেমন পাহাড়ি অঞ্চল ও সন্দ্বীপ দ্বীপে, বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে ওয়াশব্লক ও গভীর নলকূপ স্থাপন কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এতে এলাকার শিশু ও সাধারণ জনগণের জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া, মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৪,৭০০টি টুইনপিট ল্যাট্রিন নির্মাণের মাধ্যমে স্যানিটেশন ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আনা হয়েছে। একই সঙ্গে, কিছু বৃহৎ পানি সরবরাহ schemেও কাজ চলমান। এর মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে ৩০-৪০টি পরিবারে নিরাপদ পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে যেমন, ৬,৩৩৬টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ও ৬৩০টি ক্যাচমেন্ট এলাকা তৈরি। এতে করে, বর্ষা মৌসুমে পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা চালু হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানির সংকট মোকাবেলায় সহায়ক। এর ফলে উপকূলীয় জনগণ জল সংকট থেকে রক্ষা পেয়েছেন এবং পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি কমেছে।

অতিরিক্তভাবে, ৩২টি পৌরসভায় পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে নানা প্রকল্পও সময় উপযোগীভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। সাতকানিয়ায় ৪০টি কমিউনিটি ও পাবলিক টয়লেট, ৪৭টি বিন নির্মাণ, ড্রেন ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ এগিয়ে চলেছে। বাঁশখালী ও চন্দনাইশ পুরসভার ইমপ্রুভড হাউসহোল্ড টয়লেট নির্মাণসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে যাতে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ, যেমন দূরবর্তী এলাকা বা মৌসুমী জলস্রোত বিশিষ্ট স্থানগুলোতে টিউবওয়েল ও স্যানিটেশন অবকাঠামো নির্মাণ। এসব কর্মকাণ্ডের সাফল্য জেলার মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এখন এই অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন সুবিধায় অনেকটাই এগিয়ে এসেছে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।