ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে বেশ কিছু দেশ, তবে এখনও কিছু দেশ অব্যাহত রয়েছে বিরোধে

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫

গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান সংঘর্ষের মাঝখানে, এই মুহূর্তে বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘে একযোগে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও অন্যান্য দেশের এই স্বীকৃতি ঘোষিত হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে দেখা যায়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মোট স্থায়ী সদস্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাদে অন্য চার দেশ—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া—ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা স্বীকার করেছে।

১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর, ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে এই ভূখণ্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে, বাস্তবে এই এলাকাগুলির মধ্যে পশ্চিম তীর এখন ইসরায়েলের দখলে থাকছে, আর গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে এখনও পর্যন্ত, জাতিসংঘের প্রায় ৮০ শতাংশ সদস্য রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে অন্তত ১৫১টি দেশ এখনও এই স্বীকৃতি দিয়েছে। সোমবারের ঘোষণার ফলে ছয়টি ইউরোপীয় দেশ—ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, অ্যান্ডোরা ও মোনাকো—নতুন করে এই তালিকায় যুক্ত হলো। এর আগে, জি-৭ দেশের মধ্যে প্রথম হিসেবে, যুক্তরাজ্য ও কানাডা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেন। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালও এই স্বীকৃতি প্রদান করে।

এই স্বীকৃতির তালিকায় অন্য অনেক দেশের মতো, রুশিয়া, বেশ কিছু আরব, আফ্রিকান ও লাতিন মার্কিন দেশেরও ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর নেতা ইয়াসির আরাফাত যখন একতরফাভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, মূলত সেই সময় আলজেরিয়া প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এরপর কয়েক সপ্তাহ ও মাসের মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেয়।

২০১০ এবং ২০১১ সালে একটি নতুন ঢেউয়ে বহু দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমানে, ২০২৩ সালের ৭অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর গাজায় ইসরায়েলি হামলার কারণে এই তালিকায় আরও ১৯টি দেশ যুক্ত হয়েছে।

অন্যদিকে, এখনও কমপক্ষে ৩৯টি দেশ এই ভূখণ্ডকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার এই ধারণাটাকেই সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যাত করে। এশিয়ার মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুর এই তালিকায় রয়েছে, আবার আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশও এই বিষয়ে অনিষ্পন্ন।

অল্প সময়ের মধ্যেই ইউরোপের কিছু দেশ এই বিষয়ে বিভাজনে পড়ে ছিল। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে, শুধুমাত্র তুরস্ক ও সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলো ছাড়া ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি, সাবেক পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো হাঙ্গেরি ও চেক প্রজাতন্ত্র এখনও এই স্বীকৃতি দেয়নি।

পশ্চিম ও উত্তর ইউরোপের কিছু দেশ একসময় এই বিষয়ে একমত ছিল না। তবে ২০১৪ সালে সুইডেন প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ায়। এরপর, ২০২৪ সালে নরওয়ে, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়া এই স্বীকৃতি প্রদান করে। সম্প্রতি আরও কিছু ইউরোপীয় দেশ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে, তবে ইতালি ও জার্মানি এখনও এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেনি।

অন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে, فرانسের অক্স-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক রোমেন লে বোয়েফ বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া একটি জটিল ও সংবেদনশীল বিষয়। তিনি ব্যাখ্যা করেন, দেশে দেশে এই স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট নীতিমালা বা অফিস নেই। এই অধ্যাপক জানান, আন্তর্জাতিক আইনে স্পষ্ট—‘স্বীকৃতি মানে এই নয় যে কোনও একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। আবার, স্বীকৃতির অভাবও কোনও রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে ক্ষুণ্ণ করে না।’

বেসরকারি বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্বীকৃতি রাজনৈতিক ও প্রতীকী গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বের তিন চতুর্থাংশ দেশ মনে করে, ফিলিস্তিন বর্তমানে সব শর্ত পূরণ করে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। যেমন ব্রিটিশ-ফরাসি আইনজীবী ও অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস এই অবস্থা ব্যাখ্যা করে বলেন, “অনেকের জন্য এটি কেবল প্রতীকী মনে হতে পারে। তবে, এই প্রতীকী স্বীকৃতিই পরিবর্তনের সূচনা এনে দেয়। একবার যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তবে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সমমানের দেশ হিসেবে গণ্য হবে।”