বাংলাদেশের আর্থিক খাত ব্যাংক ঋণে শতভাগ নির্ভরশীল: অর্থ উপদেষ্টার উদ্বেগ

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শ্রেণীটি একান্তই ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। বেসরকারি এবং সরকারি উভয় ক্ষেত্রেই ঋণ গ্রহণের প্রবণতা খুবই বেশি, যা অনেক সময় তারা পরিশোধ করতে না পারার কারণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। তিনি এভাবেই বাংলাদেশের ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করেছেন। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন, যেখানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের বন্ড ও সুকুক বাজার উন্মোচন: রাজস্ব স্থিতি, অবকাঠামো বাস্তবায়ন ও ইসলামী মানি মার্কেট উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঝুঁকি ভাগাভাগির জন্য একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার তৈরি ও সক্রিয় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। তিনি জনগণের মধ্যে বিনিয়োগে ঝুঁকি স্বীকারের মহত্ত্বের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বিশেষ করে, ছোট বিনিয়োগকারীরাই বিনিয়োগের মুনাফা নিশ্চিত মনে করে থাকেন, কিন্তু তারা এই বাজারের ঝুঁকি সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই ডিএসই এবং বিএসইসিকে আরও বেশি করে বিনিয়োগ শিক্ষাদান ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, সুকুক ইনস্ট্রুমেন্টটি ব্যাংকের উপর চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়। দেশের প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের এই সুকুক এখন প্রধানত সরকারি প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, তিনি জানান, বেসরকারি খাতও এই টুলটি ব্যবহার করে অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক উদ্যোগে অর্থায়ন করতে পারে।

তিনি মন্তব্য করেন, একটি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে ব্যাংকের পাশাপাশি একটি গতিশীল পুঁজিবাজার, বিমা খাত ও বিভিন্ন বিশেষ ট্যাক্স ইনস্ট্রুমেন্টের উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণ ও সরকারের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে এবং মানুষকে বুঝতে দিতে হবে যে তারা কর দিয়ে থাকেন, আর বিনিময়ে সেবা পান। এটাই সুস্থ শাসনব্যবস্থার চূড়ান্ত পরীক্ষা।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো অর্থায়নের অভাব। সরকারি মানুষরা অনেকসময় মনে করেন, সবকিছু দিয়ে দেওয়া হবে, কিন্তু বাস্তবে অর্থের পর্যাপ্ত পরিমাণ না থাকায় সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের দেশের অর্থনীতি উন্নত করতে হলে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাস্তব উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থের যোগান বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে ব্যাংকের পাশাপাশি পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী ও সুকুক বন্ড বাজারের সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়ে, এই ক্ষেত্রে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রশংসা করেন। যার মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পের জন্য অর্থসংস্থান আরও সহজ ও দ্রুত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। এর জন্য বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক মিলেই কাজ করছে। তিনি জানান, বন্ড মার্কেটের অবকাঠামো শক্তিশালী করতে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে, যা খুব শীগগিরই সরকারের কাছে পেশ করা হবে। এই প্রতিবেদনে বন্ডের চাহিদা ও সরবরাহ বৃদ্ধি, সরকারি ও কর্পোরেট বন্ডের উন্নয়নের দিকনির্দেশনা থাকবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট, যা বর্তমানে সবচেয়ে ক্ষুদ্র, সেটিকে দেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও অর্থপ্রতিষ্ঠান বিভাগ সচিব নাজমা মোবারেক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ অর্লিন্সের অধ্যাপক এম. কবীর হাসান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ।