কুকুরের প্রতি রনির অগাধ ভালোবাসা ও মানবিক উদারতা Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর বাজারে পথের বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর জীবন যেন এক অনন্য হাসির গল্প। এই কুকুরগুলো এখন মানুষের মতো তিন বেলা পেট ভরে খাবার পাচ্ছে, যা এক বিশাল মানবিক ইঙ্গিত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে এই কুকুরগুলোকে একসাথে জড়ো করে খাবার দেন মোবাইল মেকানিক জি এম রনি, যিনি নিজ হাতে তৈরি করেন তাদের খাবার। এই খাবারের তালিকায় রয়েছে দুধ-মাখানো ভাত, পাউরুটি, বিস্কুট এবং বিশেষ দিনগুলোতে মাংসের রান্নাও। কখনো কখনো, বাড়িতে মাংস রান্না হলে, সেই রান্নার কিছু অংশ রনি অবশ্যই কুকুরদের জন্য সংগ্রহ করেন। রনি বলছেন, এই ভালোবাসা যেন স্বয়ং ভগবানের প্রতি প্রেমের প্রকাশ। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি এই কাজটি করছেন, যা স্থানীয়দের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এর মাধ্যমে মানবতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। নিজের গ্রামের আবুল হোসেন গাজীর ছেলে রনি, একজন মোবাইল মেকানিক হিসেবে কাজ করেন ঘাঘর বাজারে। ছোটবেলা থেকেই পশুপাখির প্রতি তার গভীর ভালোবাসা। প্রথমে নিজের পোষা প্রাণীদের মত করে অন্যের পথের কুকুরগুলিকে খাবার খাওয়াতে শুরু করেন। করোনাকালীন লকডাউনে যখন বাজারের দোকানপাট বন্ধ ছিল এবং মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত, তখন এই কুকুরগুলোর জন্য খাবার সংগ্রহ করে দেন রনি। স্বেচ্ছায় ঘর থেকে রান্না করে নিয়ে আসেন তাদের জন্য। প্রথমে পাঁচ থেকে সাতটি কুকুরের জন্য এই ব্যবস্থা শুরু হলেও এখন সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০-এ। তার পাশাপাশি, অসুস্থ বা আঘাতপ্রাপ্ত কুকুরের চিকিৎসাও দায়িত্ব নিয়ে থাকেন রনি। নিজের হাতে ওষুধ দিয়ে, ক্ষত পরিষ্কার করে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করেন। আগে যেখানে এই কাজে তার পরিবার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিরাগভাজন ছিলেন, আজ তাদের সবাই তার প্রশংসা করছে। এমনকি তার স্ত্রীও নিয়মিত সহায়তা করছেন এই মানবিক কাজে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যও এই কর্মকাণ্ডে পাশে থাকেন, জানান রনি। তিনি বলেন, প্রথম থেকেই পশুপাখির প্রতি গভীর ভালোবাসা আমার। এই ভালবাসা থেকেই করোনাকালে খাবার সংকটে থাকা কুকুরগুলোকে সাহায্য শুরু করি। এখনো এ কর্মপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি, কুকুর ও অন্য প্রাণীদের প্রতি এই সুন্দর প্রেমের কারণে আজ আমার জীবন আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে। তবে সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় আছি, কবে পর্যন্ত এগুলো চালিয়ে যেতে পারব। অন্য ব্যবসায়ীরা যেমন উজ্জ্বল সাহা, আক্কেল আলী ও সংকর সাহা রনির এই মানবিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখছেন। তারা বলেন, প্রথম দিকে এই কাজ নিয়ে অনেক উপহাস হলেও এখন বুঝতে পেরেছেন, এটি সত্যিই এক সুন্দর ও মানবিক দৃষ্টান্ত। এইসব কুকুরের মধ্যে এখন আর কেউ কাউকে কামড় দিচ্ছে না, শান্তির জন্য তারা এখন রনি ও তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ। এডভোকেট মাসুম মৃধা বলেন, রনির এই উদ্যোগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষ শুধু অন্য মানুষের জন্যই না, অন্য জীবের জন্যও। রনির মতো উদ্যোগী থাকলে পৃথিবী অনেক সুন্দর হবে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত তার মতো আরও বেশি বেশি প্রাণীপ্রেমী মানুষকে সমর্থন করা এবং তাদের পাশে থাকা। SHARES সারাদেশ বিষয়: