গাজা শহরে দখলের জন্য ইসরায়েলি হামলা ও স্থল অভিযান শুরু Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ২:৪২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা অঞ্চলে গত দু’বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র স্থল ও বিমান হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটির দখল নেওয়ার লক্ষ্য রেখে তারা ব্যাপক বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করেছে, পাশাপাশি সেনা মোতায়েন করে ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুতির জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছে। স্থানীয় সূত্রের বরাতে আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শহরের প্রধান আবাসিক এলাকাগুলোর দিকে কার্যত অগ্রসর হচ্ছে। বোমা বর্ষণ, গোলাগুলির মধ্য দিয়ে মানুষ তাদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস এই বর্বর হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছেন। শুরুর দিকে অনেক ফিলিস্তিনি নাগরিক গাজা ছেড়ে চলে যান বলে জানা গেলেও, এখন যাঁরা শহরে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আতঙ্কের ছায়া কেড়ে বসেছে। ইসরায়েলি বাহিনী একের পর এক আবাসিক ভবনে বোমা মারছে, ফলে শহরের পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে খারাপ হয়ে উঠেছে। প্রাণে বাঁচাতে বহু মানুষ দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার গাজায় কমপক্ষে ৯১ জন ফিলিস্তিনি জীবন হারিয়েছেন। এর মধ্যে একটি বাসে বোমা হামলা চালিয়ে দখলদার বাহিনী বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সতর্ক করে দিয়েছে, এই অভিযানের ফলে হতাহত সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। একই সময়ে, ইসরায়েলি সেনারা বোমা বোঝাই রোবট ব্যবহার করে শহরের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চল ধ্বংস করছে। ইউরো-মেড মনিটর জানিয়েছে, এই মাসের শুরুর দিকে ২০টির মতো এমন রোবট মোতায়েন করা হয়েছে, যা কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস করতে সক্ষম। দীর্ঘ দুই বছরের যুদ্ধের ফলে প্রায় এক লাখ ফিলিস্তিনি গাজা শহরে ফিরে এসে ধ্বংসস্তূপের মাঝে বসবাস শুরু করেছিলেন। তবে বর্তমানে শহরটিতে কতজন বাস করছেন, সে বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসছে। ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আনুমানিক সাড়ে ৩ লাখ মানুষ শহর থেকে পালিয়ে গেছেন। অন্যদিকে, গাজার সরকারি মিডিয়া বলছে, মাত্র সাড়ে ৩ লাখ মানুষ শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিম অংশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ পুরোপুরি শহর ছেড়ে চলে গেছে। অন্যদিকে, জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন গাজায় ইসরায়েলের চালানো যুদ্ধকে গণহত্যা বলে উল্লেখ করে। দুই বছরের এই সংঘর্ষে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা ফিলিস্তিনের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রকাশ্য বিবৃতিতে স্পষ্ট হয়েছে যে তারা ফিলিস্তিনিদের ধ্বংসের জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। পশ্চিম তীরের নাবলুসেও ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চালানো হচ্ছে। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, কাফর কিল্লাল শহরে আইডিএফ বোমা ফেলে আঘাত হানছে। ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছেন, এই বৃহৎ স্থল হামলায় তাদের দুটি ডিভিশন অংশ নিয়েছে, যেখানে ২০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন রয়েছে। হামলার আগে শহরবাসীদের সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তবে এখনও প্রায় ৬ লাখ মানুষ শহরে থেকে গিয়েছেন। গাজা শহর থেকে সাধারণ মানুষ দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য একটি অস্থায়ী পরিবহন রুট চালু করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বুধবার জানিয়েছে, ‘সালাহ আল-দ্বিন স্ট্রিটের মাধ্যমে একটি অস্থায়ী করিডর’ খোলা হয়েছে, যা ৪৮ ঘণ্টা চালু থাকবে। এই প্রক্রিয়াটি গাজা উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণে বাতাসে এবং ভূমিতে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেবার জন্য ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। এর আগে, গাজা থেকে উপকূলীয় রাস্তায় সড়ক করে বাসিন্দাদের জন্য মানবিক ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশনা ছিল। এই রুটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তাদের নিরাপদ স্থানগুলোতে প্রত্যাহার করতে পারবেন। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: