উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য নতুন আর্থিক ব্যবস্থা গড়তে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মানুষের জন্ম শুধুমাত্র চাকরি করার জন্য নয়, বরং উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য। এ কারণে দেশের অর্থনীতিতে এ ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে এবং এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে যেখানে সবাই উদ্যোক্তা হতে পারবে।

আজ রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খিলজি রোডে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘মানুষ আসলে কারো চাকরি করার জন্য জন্ম নেয়নি, বরং নিজ উদ্যোগে নিজের পথ চলার জন্য। আমাদের উচিত একটি এমন অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে প্রত্যেকেই নিজের উদ্যোগ শুরু করতে পারবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে।’

তিনি আরও জানান, বর্তমান প্রজন্ম আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন ও স্বাবলম্বী। গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও অনেক কিছু বোঝে, নিজের চিন্তাভাবনায় সমৃদ্ধ। তাই এদের জন্য এমন একটি সামাজিক ও আর্থিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তারা স্বচ্ছন্দে নিজস্ব উদ্যোগ নিতে পারে—চাইলে এককভাবে বা কোনও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে পারি যেখানে মানুষ নিজ উদ্যোগ শুরু করতে ও বিনিয়োগকারী হিসেবে অংশ নিতে পারে—তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক পরিবর্তন বাস্তবায়িত হবে।’

অজস্র উদ্যমী ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দেশে ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যারা দলগতভাবে কাজ করে চলেছেন। এসব উদ্যোগের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে আরও বিস্তৃত করতে হবে।

উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পিকেএসএফ-এর জন্মের কাহিনী বেশ আকর্ষণীয়, যা অনেকটা ঘটনাচক্রে শুরু হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক ২০ কোটি টাকা দিচ্ছিল, সেটি নিয়ে নানা আলোচনা ও মতবিনিময় হয়। এই অর্থের জন্য তখন সরকার, পরিকল্পনা কমিশন ও দাতা সংস্থাদের মধ্যে যোগাযোগ চলে। রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত নিজে এতে যুক্ত ছিলেন।

তিনি বলেন, এই ২০ কোটি টাকা ছাড়া পিকেএসএফের জন্ম হতো না। তখন একটি কমিটি গঠিত হয়, যেখানে আমি সদস্য ছিলাম এবং প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারিত হয়—পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।

আলোচনায় তিনি জানান, এই প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হিসেবে শুরু হলেও এর কার্যক্রম সময়ের সঙ্গে আরও বিস্তৃত হয়েছে। তবে কিছু কাঠামোগত ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ এসেছে, যেমন মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির সঙ্গে দূরত্ব। এই দূরত্ব কাটিয়ে উঠতে হবে।

তিনি বলছেন, ‘আমরা মূলত অর্থ দিচ্ছি না, বরং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে থাকি। তাই নতুন করে এই কাঠামোকে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, এখন সময় এসেছে এমন একটি আর্থিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার, যেখানে ব্যক্তি উদ্যোগকে প্রাধান্য দেওয়া হবে—সংগঠন নয়। ‘আমরা চাই যেন উদ্যোক্তারা ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে আসে, আমরা তার সঙ্গে অংশীদারিত্ব করি, শুধু ঋণ নয়—সোজাসাপ্টা বিনিয়োগও। যদি কেউ পঞ্চাশ লাখ টাকা চায়, আমরা দিতে আগ্রহী, তবে শেয়ার ধরে থাকবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এমন সফল উদ্যোক্তাদের জন্য ধীরে ধীরে মালিকানা নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগও থাকছে। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে তিনি একটি কাঠামো প্রস্তাব করেন, যেখানে যৌথ মালিকানা থেকে শুরু করে পুরো মালিকানায় রূপান্তর করা যাবে।

প্রথমে ভালো করলে, তাদের পুরো প্রতিষ্ঠান নিজের করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। তিনি জানান, সামাজিকভাবে সহায়তার পাশাপাশি প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রত্যেককে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

বর্তমানে বিদ্যমান আইনগুলো এতেও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে, বলেন ইউনূস, ৮০ দশকের আইন এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। বিশেষ করে পিকেএসএফ-এর নিজস্ব আইনের সংস্কার দরকার, যাতে বিভিন্ন কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

তিনি বলে থাকেন, ‘এই ভবনের উদ্বোধন পিকেএসএফ-এর নতুন দিগন্তের সূচনা। ৩৫ বছরের এই পথচলায় অর্জন অনেক, এখন বড় পরিসরে এগিয়ে যাওয়ার সময়।’

ইউনূস আশা করেন, ‘টাকার অভাব হবে না। আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ওপর আস্থা আছে। সর্বোপরি একটি সমন্বিত অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুললে, স্বপ্নের মতো উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য অর্জিত হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান, এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের।