ভেড়ামারায় পানচাষিদের দুর্দশা কাটছে না

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় সুস্বাদু ও বৃহৎ আকারের পান উৎপাদনের জন্য এলাকাটি বিশেষ পরিচিত। তবে, বর্তমানে পানচাষিদের জন্য পরিস্থিতি মারাত্মক খারাপ হয়ে পড়েছে। পানের দাম খুবই কম হওয়ায়, উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চাষীরা লাভে না থাকার কারণে তারা বাধ্য হয়ে পান চাষ থেকে মুখ ফিরাচ্ছেন। ফলে, অনেক প্রান্তিক কৃষক তাদের বরজ ভেঙে দিচ্ছেন।

জানা যায়, ভেড়ামারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মোট প্রায় ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। এখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন পান উৎপাদিত হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে এই অঞ্চলটি পান চাষের জন্য বিখ্যাত হলেও আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন।

সারেজমিনে দেখা যায়, জুনিয়াদহ, ধরমপুর ও বাহাদুরপুর এই তিন ইউনিয়নের প্রান্তিক পানচাষিরা অসহনীয় দুর্দশার মুখোমুখি। প্রতি বিঘা নতুন পান বরজে নির্মাণের জন্য খরচ হয় প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা, তবে বিক্রি হয় মাত্র ১ লাখের কম। পান বরজের জন্য ব্যবহার হওয়া সরঞ্জামের দামও আগেকার তুলনায় অনেক বেড়েছে। শ্রমিকের দরও বেড়ে গেছে, আগের মতো টাকা নেওয়া যায় না। অনেকে পান বরজের মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছেন না। দাম কম থাকায় অনেক চাষী তাঁদের বরজের পান ভেঙছেন না, বরং ঋণের বোঝা সহ্য করে কেউ কেউ বরজ বিক্রি বা অন্য চাষাবাদের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। এই ঋণের চাপ বন্ধ করতে না পারায় অনেকের গৃহ ও জমি হারানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

পান হাটেও দেখা যায়, ৫০-২০০ টাকার বিড়ার পান বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন দামে। ভালো মানের পান বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৬০ টাকা প্রতি বিড়ায়।

পানচাষি মো. রফিক জানান, তিনি প্রতি বিড়ার পান বিক্রি করছেন মাত্র ৭ টাকায়, যা গত বছর ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি করতেন। এতে করে পান ভাঙা এবং যাতায়াতের খরচ উঠে আসছে না, ফলে তিনি আর এই ব্যবসা চালাতে চান না। একইভাবে, তুষার নামে এক পানচাষি তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, তাঁর জীবনে এমন কম দামে পান খেয়েছেন কি না, জানেন না। তাঁর ৯০ পিলি পান বরজ ছিল, কিন্তু এখন দাম না পাওয়ায় তিনি বরজ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বাহাদুরপুরের ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা জমেলা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তাঁর ৪০ বছরের পুরোনো পান বরজ এখন অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। না তিনি সেটি ভাঙতে পারছেন, না রাখতে। বাজারে পান নিলে খরচের টাকা ও ফেরত পান না।

জগশ্বর পানহাটের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন বলেন, উৎপাদন বেশি হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি না থাকায় এ বছর পান চাষের দাম অন্যান্য বছর অপেক্ষা অনেক নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু শ্রমিকের দাম ও সরঞ্জামাদি প্রতি বছর গুণে গুণে বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি কোনো প্রণোদনা না থাকায় এই ক্ষতজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ক্ষোভে ভুগছেন চাষিরা, তারা যাবতীয় ঋণের বোঝা নিয়ে এ খেত থেকে সরে আসছেন। এই অর্থকরী খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা দরকার।

ভেড়ামারা উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার আশফাকুর রহমান দৈনিক বাংলাকে জানান, পান চাষিদের দুর্দশা এবং দামের কমের বিষয়টি আমাদেরও জানা আছে। তিনি বলেছেন, এই দুর্দশার জন্য আমরা সচেতন।