দখল ও দূষণে বিপন্ন হচ্ছে গোপালগঞ্জের প্রাকৃতিক খাল-বিলগুলো

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫

নিম্নাঞ্চল ও জলাভূমি দ্বারা ঘেরা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার প্রায় দুই শ খাল-বিল থেকে এক সময় বিলীন ছিল নানা রকমের মাছের সমারোহ, যেমন শোল, টাকি, কৈ, শিং, মাগুর, পাঙ্গাস, বোয়াল, চিতল, ফলি, পুটি, খলসে, চুচড়া, মলা, ভুষি চিংড়ি, টেংরাসসহ শতাধিক ধরণের মাছ। তবে দিনদিন অবৈধ দখল ও দূষণের কারণে এই প্রাকৃতিক সম্পদগুলো সংকটের সম্মুখীন হয়েছে, যার ফলে এসব দেশের মধ্যে গণ্যপ্রাণ মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

জানাগেছে, উপজেলার দেড় শতাধিক সরকারি খাল ও বিলের উপর অর্ধশতাধিক বাঁধ স্থাপন করে প্রভাবশালী মহল দখল করেছেন এগুলোর। এ ছাড়া ব্রিজ নির্মাণ ও খনন কাজে ব্যবহার হওয়ায় অনেক খাল দীর্ঘ সময় বাঁধ দিয়ে আটকে থাকায় কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, যা পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে জলাধারগুলোতে পানির গতি কমে গেছে এবং মাছের প্রজনন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কলমুনিয়া খাল, তিতাল বাড়ি খাল, পেত্নীখালি খাল, বাসাখালী, কুমলাবতী খাল, গোদার খাল ও অন্যান্য প্রায় ৩০টি খাল রয়েছে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে রেখেছেন। এর মধ্যে অনেকের কাছে রয়েছে মাছচাষের জন্য বিশেষ শেয়ার, আর সাধারণ মানুষ এখন আর পক্ষে মাছ ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এই দখলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, ইউপি মেম্বার এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

অন্যদিকে, বিভিন্ন ছোট-বড় বিলগুলোও দখল এবং মাছ চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। খাল দখলে থাকা নানা স্থানে মাছচাষের জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে, ফলে ক্ষুদ্র মাছ চাষীরা মাছ ধরতে পারছেন না এবং তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।

গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া খালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাল খননের জন্য বাঁধ দেওয়া হয় মহামারী করোনার পর থেকে, কিন্তু কাজের অঝোরে এ ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। জলাবদ্ধতা ও পানির দূষণের কারণে পানি পচে গলে যাচ্ছে এবং চলাচল ও ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে গত ১৩ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিভিন্ন ভুক্তভোগী ব্যক্তি অভিযোগ করেন, কিন্তু এরপরও কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কোটালীপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার আরো জানান, এসব অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদে দ্রুত অভিযান চালানো হবে, যাতে দেশীয় মাছের প্রজনন ও বিস্তার সম্ভব হয়।

নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম বিল্লাহ উল্লেখ করেন, এই এলাকা দরিদ্র ও জলাভূমি সমৃদ্ধ, যেখানে কৃষি ও মাছ চাষ মানুষের প্রধান উপার্জনের উৎস। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু অভিযান চালিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।