একসঙ্গে পুতিন, শি ও কিমের ছবি, ট্রাম্পের ষড়যন্ত্রের গন্ধ ধারণা বিশ্লেষকদের

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৪৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুই বিশ্বযুদ্ধের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য আয়োজন করেছেন বিশ্বের মানুষের নজরকাড়া কুচকাওয়াজ। এই অনুষ্ঠানে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় ছিল, লাল গালিচায় পদচারণা করেন শি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের উপস্থিতি এবং তাদের মধ্যে আন্তঃমিলন। এই বিরল দৃশ্যটি আন্তর্জাতিক মহলের চোখে পড়েছে এবং অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি পশ্চিমা শক্তির জন্য এক ধরনের বার্তা। বিশ্বরাজনীতিতে আমেরিকার নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার সাথে সাথেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে শুল্কযুদ্ধকে আরও চড় горিয়ে তুলেছেন। তিনি মিত্র ও প্রতিপক্ষ সব দেশকে তার নতুন নীতিতে আনার চেষ্টা করছেন, যার ফলে বিশ্বে এক নতুন জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই কুচকাওয়াজে চীনের প্রেসিডেন্ট শক্তিশালী সামরিক প্রদর্শনী করেন, যেখানে তাকে পাশে দেখা যায় পুতিন ও কিমকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি এই দৃশ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়ে থাকেন ট্রাম্প। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট শি এবং চীনের জনগণকে মহান ও দীর্ঘস্থায়ী এই উদযাপনের জন্য শুভেচ্ছা। তবে যখন আপনারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, তখন পুতিন ও কিমকে আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাতে ভুলবেন না।’ শি জিনপিং বলেন, ‘মানবজাতি এখন এমন এক পর্যায়ে যেখানে শান্তি বা যুদ্ধ, সংলাপ বা সংঘর্ষ, পারস্পরিক কল্যাণ বা অকল্যাণ— এর কোনোটিই আর আরেকটির বাইরে নয়। চীনের জনগণ এই ইতিহাসের সঠিক পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন।’ একইসাথে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, কিছু দেশ ‘বুলিং আচরণ’ করছে, কিন্তু চীন কাউকে আটকে রাখতে পারবে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অনুষ্ঠানে রয়েছে আন্তর্জাতিক শক্তির খেলায় প্রতিপক্ষের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। চীন এই আয়োজনের মাধ্যমে দেখাতে চায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরও তারা বন্ধুত্বের হাত তুলে রেখেছে। এতে উপস্থিত ছিল ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ও মিয়ানমারের সামরিক প্রধান মিন অং হ্লাইং। তবে, কোনও বড় পশ্চিমা নেতা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতেই এই কুচকাওয়াজ তৈরি হয়েছে। এর আগে, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন উপস্থিত থাকলেও, কিম সেখানে যাননি। কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত ছিলেন। এখন সকলের নজর পড়েছে শি, পুতিন ও কিমের মধ্যে কোনও বৈঠক হবে কি না, তার দিকে। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিম চুয়ান-তিয়ং বলেছেন, যদি এই তিন নেতার মধ্যে কোন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়, তবে তা বিশ্বে নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের প্রসঙ্গ তৈরি করতে পারে। অন্যথায়, বোঝা যায়, চীন যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখতে চাইছে না এবং শি চেষ্টা করছেন এই সম্পর্কের অস্পষ্টতা বজায় রাখতে। সামরিক দিক থেকেও দেখেছেন বিশ্লেষকেরা, যেখানে রয়েছে ট্যাংক, ড্রোন, পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও স্টেলথ বিমান— নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রযুক্তিও উন্মোচিত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিজ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোকে সতর্ক করে দেয়। মূলত, এই সামরিক প্রদর্শনীতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তাইওয়ানের বিষয়টি, যেখানে শি বারবার ‘চীনা জাতির পুনর্জাগরণের’ কথা বলেছেন। চীনা সরকার সেখানে দাবি করে, তাইওয়ান চীনের একটি প্রদেশ, তবে তাইওয়ানের জনগণ ও সরকার এই দাবির বিরোধিতা করে চলেছেন। বর্তমানে, এই প্রস্তাব ও উদযাপন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক নতুন রাজনৈতিক বার্তার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।