সাবেক আইজিপির জবানবন্দি: হাসিনার দুঃশাসনের অকাট্য দলিল—চিফ প্রসিকিউটর Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫ অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে দেওয়া voormalig আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জবানবন্দি শেখ হাসিনার দুঃশাসনের এক অকাট্য দলিল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। গতকাল চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বাসসকে জানান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের জবানবন্দি সত্যিই শেখ হাসিনার উপর মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ হিসেবে বিশ্লেষণযোগ্য। এই মামলায়, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে, ট্রাইব্যুনালে গত মঙ্গলবার চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন তার জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তাকে ফোন করে জানিয়ে দেন कि আন্দোলন দমন করতে সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তখন তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে ছিলেন, পাশে ছিলেন তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার। এরপর থেকেই সারাদেশে হত্যা, আহত ও নিস্ঙ্গশক্তি ব্যবহারের জন্য এই নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়। চৌধুরী মামুন আরও বলেন, প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারে উৎসাহ দিয়ে ছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে, আন্দোলন দমন করার জন্য গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয় এবং আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের আটক করার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খানসহ বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমন করতে হেলিকপ্টার ও ড্রোনের ব্যবহারও সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, যার পরামর্শ দিয়েছিলেন র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশীদ। এই অভিযানকালে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাদের হত্যা ও আহত করা হয়। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই কোর কমিটির নিয়মিত বৈঠক হত যেখানে আন্দোলন দমনসহ নানা নির্দেশনা দেওয়া হতো। সেই সময়, ব্যারিস্টার আরমানের আটক থাকা বিষয়ও তার জানা ছিল, যা সরকার গোপন রেখেছিল। বৈঠকে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ আন্দোলন বন্ধের পরিকল্পনাও আলোচিত হয় এবং পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করে। তিনি জানান, ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার সময় সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত ছিলেন যেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সেনা কর্মকর্তারা আরও উপস্থিত ছিলেন। এরপর ৫ আগস্ট সকালে, পুলিশ হেডকোয়ার্টারে গিয়ে তিনি বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ছাত্র-জনতার প্রবেশের ছবি দেখেন, যেখানে এক ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের বন্দুকের গুলি চালানোর কথাও। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়, ডিআইজি জাবেদ পাটোয়ারী ঢাকা রেঞ্জের দায়িত্বে থাকাকালে শেখ হাসিনাকে ৫০ শতাংশ ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। বর্ণনায় তিনি জানান, এরপর সরকারের নির্দেশে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয় এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের পুরস্কৃতও করা হয়। তিনি আরও বলেন, র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যবর্তী সময়গুলোর অভিজ্ঞতার কথা। সেই সময়, র্যাবের বন্দিশালাগুলোতে রাজনৈতিক বিরোধী ও সরকারের জন্য হুমকি তৈরি করতে থাকা ব্যক্তিদের আটক রাখা হতো। এসব অপারেশন দেশের এই অন্ধকার অধ্যায়কে ফুটিয়ে তোলে। ভূমিকায়, সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও এই নির্দেশনা আসত বলে তিনি উল্লেখ করেন। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তার জানা ছিলো যে, ব্যারিস্টার আরমানের আটক, গোপনীয়তা ও সরাসরি নির্দেশনা আরও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এই বিষয়গুলো গোপনে পরিচালিত হয়েছে। সম্মতিপত্র, গোপনীয়তা ও হুকুমের ভিতর চলে এসব অপারেশন। তিনি বলেন, আন্দোলনের দিনগুলোতে সরকারের ব্যাপক অতি বলপ্রয়োগের ফলে নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো খুবই বিব্রতকর। আমি পুলিশ সন্তুষ্ট ও অপরাধের জন্য অনুতপ্ত, এবং আমি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য মানসিকভাবে দুঃখিত। আমি মনে করি, এই সব হত্যাকাণ্ডের জন্য আমি দায়ী। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, পূর্বের ভুলে আমি ক্ষমা চাচ্ছি এবং আমার এই সত্যবাদিতার মাধ্যমে সত্য উন্মোচনে এগিয়ে যাব। আমার বিশ্বাস, এই সত্যাই ইতিহাসে জায়গা নেবে। এই সাক্ষ্য ফলে বাংলাদেশের গত ১৫ বছরে ঘটে যাওয়া অনেক নির্মম কর্মকাণ্ডও অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ হিসেবে থাকবে। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম বলেন, এই জবানবন্দি অবশ্যই ট্রাইব্যুনালের জন্য এক অমূল্য দলিল। এটি নিশ্চিত করে যে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকেরই জবাবে থাকতে হবে। মামলার পক্ষে আইনজীবীরা আরও জানান, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রক্ষণাবেক্ষণকারী আইনজীবীরা থাকলেও, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন যায়েদ বিন আমজাদ। SHARES জাতীয় বিষয়: