চবিতে দফায় দফায় সংঘর্ষ, শতাধিক আহত

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। শনিবার মধ্যরাতের পর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জনের বেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারि করা হয়েছে এবং হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার ১৪৪ ধারা জারি করেছেন।

এক অফিস আদেশে জানানো হয়েছে, ৩১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেটের পূর্ব সীমা থেকে রেলগেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে সকাল সাড়ে ১১টায় স্থানীয় জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। এরপর মুহুর্তে এই অংশে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয় এবং আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর ফলে পরিস্থিতি বিবর্ণ হতে থাকলে, এতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের অবনতি ঘটে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। তিনি নির্দেশ দেন, ওই এলাকার সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ-মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র বহন ও চলাফেরা নিষিদ্ধ থাকবে। এরপর বিকাল ৪টায় যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করে, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

গত শনিবার রাতে একটি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তখন ফতেপুর ইউনিয়নের ২নং গেটের কাছে এক নারী শিক্ষার্থী, সাকিফা খাতুন, দারোয়ারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে দারোয়ান তার ওপর হামলা করে। এ সময় নারী শিক্ষার্থী পাশে থাকা একজন ছেলেকে ডেকে আনলে তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ চালায়, এবং এঘটনায় অন্তত ৭০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতের বেলায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় থাকায় নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন ও পরিস্থিতি শান্ত হয়।

দ্বিতীয় দিনে রোববার সকালে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। উপ-উপাচার্য, প্রক্টর এবং অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও এ ঘটনায় আহত হন। হামলার পেছনে থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দাবি করা হয়, তারা স্থানীয় সন্ত্রাসী হানিফ গং দ্বারা প্রতিহত এবং অবৈধ ব্যবসার দখল ফিরে পেতে এই হামলা চালিয়েছে। ধারালো অস্ত্র, রাম দা, চাপাতি, ছুরি, বটি ও দা ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের ছাত্ররা আহত হয়েছে। তাদের ওপর দা দিয়ে কোপানো হয়েছে। এই পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক বিলাল হোসেন জানান, বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৫১ জন আহতকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। সবাই বিভিন্ন ধরনের চোটে আক্রান্ত। কিছু শিক্ষার্থী মাথায়, শরীরে বা হাতে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।

এই সংঘর্ষে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ব্যাপকভাবে আহত হয়। তাদের মধ্যে দুজন ভবনের ছাদে কুপিয়ে ফেলে দেওয়ার ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে, তবে পরে অন্যরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের ক্ষতি রোধে রোববারের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। উপ-উপাচার্য ড. মো. কামাল উদ্দিন জানান, বেশ কয়েকজন আহত শিক্ষার্থীর মধ্যে আছেন, যারা সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।

অপরদিকে, এই সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দলের নির্দেশনা অমান্য ও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বহিষ্কার করা হয়েছে। রোববার বিকেলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সই করা এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন। এতে বলা হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য তাকে প্রাথমিক সদস্যপদ ও সব পদ থেকে বহিষ्कৃত করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনা আরও তদন্তের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। তাদের একটি সংবাদ সম্মেলন রাত ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের 2নং গেটে অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। তারা রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী মোড়ে বিক্ষোভ শুরু করে, পরে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়া এর নেতাকর্মীরা।