রাতারাতি বৈষম্য দূর হবে না: মির্জা ফখরুল

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২৫

বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোতে দীর্ঘ সময় ধরে বৈষম্য চলে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এসব সমস্যার সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, এই রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এমনকি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই জটিলতা রয়েছে, যদিও এখনো জাতি সেই দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন সংগ্রাম এবং লড়াই করছি, সেগুলোর মুহূর্তের মধ্যে সমাধান প্রত্যাশা করা অমূলক। শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এই সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটুকু সু-রক্ষিত’, যা অর্পণ আলোক সংঘ নামে একটি সংগঠন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। সেমিনারটির আয়োজন করেন অর্পণ আলোক সংঘের চেয়ারম্যান বীথিকা বিনতে হোসাইন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের কথা বলছি, পাশাপাশি অর্থনৈতিক কাঠামোর উন্নয়নের কথাও বলছি। কিন্তু দীর্ঘদিনের সমস্ত অনাচার, অবিচার, নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচার— সবকিছু একদিনে বদলে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। ৫২ বছর ধরে আমরা একটি নিয়মিত ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে পারিনি। এখন সেই পরিস্থিতির মধ্যে, আমরা চেষ্টা করছি, তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিংবা জোড়াতালি দিয়ে কোনকিছু সম্ভব নয়। এর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও লক্ষ্যবস্ত্ত দরকার, পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আন্তরিকতা থাকতে হবে। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘এই কাঠামো বদলানো দরকার। কারণ, আমরা বেগুন গাছে রকমল ফল আশা করতে পারি না। আমাদের সামনে এখন একটা অপূর্ব সুযোগ এসেছে, যদি সেটি কাজে লাগানো যায়, তাহলে বৈষম্যহীন সমাজের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব। এজন্য আমাদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি, ম্যাজিস্ট্রেটরা সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন—তাদের কাছ থেকে সব সিদ্ধান্ত আসে, অথচ সাধারণ স্কুলশিক্ষকও নিজের সমস্যা সমাধানে ঢাকায় আসতে বাধ্য হন, যা অপ্রয়োজনীয়। এটাই আমাদের বিদ্যমান করপোরেট সিস্টেমের চেহারা। যারা ঢাকায় না আসলে, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের বানিজ্য চলতেই থাকবে। বর্তমানে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়—সব নিয়োগের জন্য ঘুষের ব্যবহার সাধারণ ব্যাপার। এই সিস্টেমের কারণে রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। অনুষ্ঠানে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনকে সংগঠিত করা। ২০১৫ সালে গণসংহতি আন্দোলন একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করে। আমরা দেশের বিভিন্ন সংগ্রাম-আন্দোলনের সাথে থাকছি। রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হলো জনগোষ্ঠীকে একত্র রাখা। আমাদের মধ্যে শ্রেণি পার্থক্য অনেক, আর অর্থনৈতিক বৈষম্য বিশাল। গত ৫৪ বছরে ক্ষমতাসীন দলগুলো এমন নীতির সৃষ্টি করে যার ফলে মূলত দুর্নীতি, লুটপাট ও অসাংবিধানিক কার্যক্রম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে ব্যাংক লুটের ঘটনা বন্ধ হয়নি, বরং বেড়েই গেছে। তবে, সম্প্রতি সরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ করা হলেও, ব্যাংকিং খাতে বৈষম্য ও দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। ব্যাংকগুলোর লুটপাটের খবর বাংলাদেশ ব্যাংকও জানতো, কিন্তু কোনো জবাবদিহিতা বা তদন্ত হয়নি। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।