রংপুরে চীনাবাদাম চাষে অর্জিত লাভের মুখ দেখছে কৃষকরা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২৫

রংপুর অঞ্চলে চীনাবাদাম চাষ একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, যা কৃষকদের জীবনে নতুন আশার আলো এনে দিয়েছে। এ বছর রংপুরের পাঁচ জেলায় রবি ও খরিফ-১ মৌসুমে কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ ২৩ হাজার ১২ টন চীনাবাদাম উৎপাদন করেছেন। বাজারে এই ফলনের প্রশংসা করছেন সংশ্লিষ্টরা, যেখানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত চীনাবাদাম বিক্রি করছেন মণপ্রতি (৪০ কেজি) ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকায়। এই লাভজনক ব্যবসার কারণে স্থানীয় কৃষকরা এখন ব্যাপক উৎসাহিত ও খুশি।

রংপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, গত রবি মৌসুমে এই অঞ্চলের ৫ হাজার ৭৬১ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৩৮০ টন। তবে চাষিরা শেষ পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৬৭৯ হেক্টরে চীনাবাদাম চাষ করে, ফলে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ হাজার ৯২৮ টন।

খরিফ-১ মৌসুমে এর চিত্র ছিল আলাদা; রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলায় ৫ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম চাষে ১১ হাজার ৪৭০ টন ফলনের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। এ মৌসুমে কৃষকরা মোট ৫ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম চাষ করেছেন, যার ফলন হয়েছে ১১ হাজার ৮০৪ টন।

গত কয়েক বছর ধরে রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উন্নত ও উচ্চ-ফলনশীল জাতের চীনাবাদাম চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের খাদ্য চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে চীনাবাদামের চাষ বাড়ছে। কৃষকরা এখন বেশি দামে বেশি ফলন পাচ্ছেন, যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে।

বিশেষ করে চরাঞ্চলের বিশাল চর জমিতে, যেখানে আগে চাষ কম হত, সেখানে এখন ব্যাপকভাবে চীনাবাদাম চাষ শুরু হয়েছে। দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের পিএইচডি ফেলো মো. মামুনুর রশিদ বলেন, একরে ২২ থেকে ২৮ মণ চীনাবাদাম উৎপাদন সম্ভব, যার মাধ্যমে কৃষকরা প্রায় ৮০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।

তিনি বলেন, পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ কৃষক ও জনগোষ্ঠী চীনাবাদামকে লাভজনক ও অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচনা করে আরও বেশি আসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর ফলস্বরূপ, কৃষকরা চাষের জন্য জমি বেছে নিচ্ছেন, মাতছেন চরাঞ্চলে এবং নদী তীরবর্তী এলাকায়।

রংপুরের স্থানীয় বাজারে চীনাবাদাম বিক্রেতা মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, “খরিফ-১ মৌসুমে বিভিন্ন জাত ও মান ভেদের উপর নির্ভর করে কৃষকরা দরপত্রে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা দরে মণ চীনাবাদাম বিক্রি করেছেন।” তিনি যোগ করেন, “এছাড়াও, স্থানীয় বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে কিনে খুচরা বিক্রেতারা প্রতি মণ বিক্রি করছেন ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার টাকায়।”

গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলার কৃষকরা, যেমন আনোয়ারুল ইসলাম, লুৎফর রহমান, ইয়াসিন আলী, সাইদুল ইসলাম, নুরুল হক ও মোহাম্মদ আলী, তারা সকলেই স্বীকার করেছেন যে, গত রবি ও খরিফ-১ মৌসুমে চীনাবাদামের ফলন অনেক ভালো ছিল এবং দামও ছিল লাভজনক। তাদের জন্য এ চাষ এখন উৎসাহের বিষয়, যা পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করছে।