সংঘর্ষের মধ্যে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গারা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২৫

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বৃদ্ধির ফলে রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় তারা নতুন করে বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করেছে। বুথিডংসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালের সহায়তায় কাঠের নৌকায় নদী পার হয়ে তারা নাফ নদী দিয়ে টেকনাফ সীমান্তের দিকে ছুটে যাচ্ছে। এরপর তারা পাল্টে উখিয়া জেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে।

প্রশাসন সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের পথে বাধা দিতে কোস্টগার্ড, বিজিবি এবং পুলিশ একাধিক অভিযান চালাচ্ছে। সম্প্রতি, রোহিঙ্গাদের নেপথ্যে কাজ করা দুই দালালকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের পরিচয় হলো—টেকনাফের নাইট্যংপাড়ার শামসুল আলম (৪৫) ও মোহাম্মদ আলমগীর ওরফে জাবের (৩১)।

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “দালালদের আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধে আরও কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।

সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে দেশে অবস্থানকারী বিজিবি সদস্যরা বিভিন্ন পয়েন্টে টহল জোরদার করেছেন। বিশেষ করে জাদিমুড়া ও নাফ নদীর পয়েন্টে গতকাল বিকেলেও কয়েকজন রোহিঙ্গা নদী পার হয়ে প্রবেশ করায় সীমান্তে সতর্কতাও বাড়ানো হয়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জনৈক মোহাম্মদ কাওছার উদ্দিন জানান, “নাফ নদীর ওপারে লালদিয়া ও পেরাংপু এলাকায় অনেক রোহিঙ্গা অপেক্ষায় আছে। গতকালের বিকেলেও কয়েকজন নদী পার হয়ে উখিয়া চলে গেছে।”

এছাড়া, টেকনাফের বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, নদীর ওপারে রাখাইনের মাংগালা অঞ্চলে অনেক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা গাড়ি যোগে উখিয়া এবং অন্যান্য স্থানে চলে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ভেতরের পরিস্থিতির বিষয়ে ক্যাম্প ২৭ নম্বরের মাঝি মো. নুর বলছেন, “আমি ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু আমার পরিবারের ৯ জন এখনও রাখাইনের মাংগালা এলাকায় আটকা রয়েছে। তাদের উপর নিয়মিত নির্যাতন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লুট ও শ্রমিক হিসেবে জবরদস্তি করছে। তাই জীবন বাঁচানোর জন্য অনেক রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হওয়া বাধ্য হচ্ছে।

অপর দিকে, ক্যাম্প ২৬ ও ২৭-এর ইনচার্জ খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন, “শোনা যাচ্ছে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। তারা উখিয়ার দিকে গেছে। মাঝিরা জানাচ্ছে, সীমান্তে আরও অনেক রোহিঙ্গা জড়ো হচ্ছে।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, “বিজিবি আটক দুজন দালালকে থানায় হস্তান্তর করেছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করে কক্সবাজার কারাগারে পাঠানো হয়।

সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হোয়াইক্যং থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত জল-স্থলপথে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে, যাতে নিরাপত্তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকে ও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের পথ রোধ করা যায়।