পুতিনের জন্য আরও ভূমি চান ট্রাম্প, ইউক্রেনের শান্তির প্রস্তাবের আহ্বান

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৮, ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তি জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইউক্রেনের জন্য রাশিয়া বিশাল একটি শক্তি, এবং তারা (ইউক্রেন) এই শক্তির কাছে অপ্রতিরোধ্য। গত শুক্রবার আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর শনিবার তিনি এই বিবৃতি দেন।

সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বলেন, পুতিনের প্রস্তাব অনুযায়ী, কিয়েভ যদি দোনেৎস্কের পুরো অঞ্চল ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া অধিকাংশ ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি হবে। তবে জেলেনস্কি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইতিমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা এবং দোনেৎস্ক প্রদেশের তিন-চতুর্থাংশ অংশ দখল করে ফেলেছে।

ট্রাম্প আরও জানান, তিনি এবং পুতিন দুজনেই মনে করেন, যুদ্ধ বন্ধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো একটি স্থির শান্তি চুক্তি, কেবল যুদ্ধবিরতি নয়। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি প্রায়ই স্থায়ী হয় না।

জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে প্রথমে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, তিনি আগামী সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, যেখানে ইউরোপীয় কিছু নেতাও উপস্থিত থাকতে পারেন।

জেলেনস্কি বারবার বলছেন, ইউক্রেন কোনো ভূখণ্ড ছাড়তে পারবে না, সাংবিধানিক সংশোধনের ব্যতিরেকে। তার মতে, দোনেৎস্কের স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাটোর্স্ক শহরগুলো রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকানোর মূল কেন্দ্র। তিনি আরও দাবি করেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যেন রাশিয়া আবার আক্রমণ চালাতে না পারে।

মস্কোর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে, রাশিয়ার অবস্থান এই বৈঠকে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। পুতিন ইউক্রেনের НАТО সদস্যপদে ভেটো দেওয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন, তবে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেন, তিনি ও পুতিন আলোচনা করেছেন ভূমি বিনিময় এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা বিষয়ক, এবং তারা এর বিষয়ে ‘প্রায় একমত’ হয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা চুক্তির কাছাকাছি রয়েছি, এখন ইউক্রেনের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া পশ্চিমা যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হওয়ায় যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি এক এক্স (টুইটার) একাউন্টে লিখেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাশিয়া একের পর এক যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করছে। কখন এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে তা এখনো জানা যায়নি। এটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।’

অপরদিকে, সোমবার জেলেনস্কি ওয়াশিংটন সফরে যাবেন। এ সময় ট্রাম্প ইউক্রেনের আসন্ন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের শান্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে কথা বলেন, সাথে সাথে ফোনে জেলেনস্কিকে প্রকৃত ও স্থায়ী শান্তি চুক্তি করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আগুন নিভাতে হবে, হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলেনস্কি মস্কোর সঙ্গে টেকসই ও নির্ভরযোগ্য শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্তগুলো তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও ক্রেমলিন কর্তৃক অধিকৃত অঞ্চল থেকে অপহৃত শিশুদে মুক্তি।

ট্রাম্পের এই বক্তব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়; আগে তিনি দ্রুত যুদ্ধবিরতি চান বলে জানিয়েছিলেন, কিন্তু এই বৈঠকের পর তিনি বলেন, যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মূল দাবি ছিল দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে আলোচনা। ট্রাম্পও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে গোপনে বলেছিলেন যে, শীর্ষ আলোচনা করে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে চান।

বৈঠকে পুতিন ট্রাম্পকে শান্তি প্রস্তাব দেন, যেখানে বলা হয়, ইউক্রেনকে ডনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে, এর বদলে রাশিয়া জাপোরিঝিয়া ও খেরাসনের সম্মুখভাগে যুদ্ধ স্থগিত করবে।

উল্লেখ্য, রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া আক্রমণ করে এবং ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ চালায়। তারা ডনবাসকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে দাবি করে এখন লুহানস্কের বেশিরভাগ ও দোনেৎস্কের ৭০ শতাংশ এলাকা দখল করেছে।

অতীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, শান্তি চুক্তির মধ্যে অঞ্চল বিনিময়ের বিষয় থাকতে পারে। ট্রাম্প এরপর ফোনে জেলেনস্কির কাছে সেই প্রস্তাব পৌঁছানোরও খবর পাওয়া গেছে।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জেলেনস্কি লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের ডনবাসের ওপর অটল থাকেনি, কারণ নতুন করে তারা এই অঞ্চলগুলো বারের জন্য লেখা হতে পারে বলে আশঙ্কা। ইউরোপীয় কূটনীতিকরা উদ্বিগ্ন, যে ট্রাম্প সোমবার জেলেনস্কিকে চাপ দিতে পারেন, যাতে তিনি বৈঠকের আলোচনাগুলো মান্য করেন। সূত্রগুলো জানায়, ট্রাম্প বৈঠকের পরে ইউরোপীয় নেতাদের ফোন করে বলেছেন, পুতিন ‘কিছু ছাড়’ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

শুক্রবারের বৈঠক শেষে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়, ইউক্রেনের জন্য তাঁর পরামর্শ কী? তিনি বলেছিলেন, ‘চুক্তি করুন’, এবং যোগ করেন, ‘রাশিয়া একটি বড় শক্তি, তারা নয়।’

পুতিন যদি যুদ্ধ শেষ করতে রাজি না হন, তাহলে ট্রাম্প আগে কঠোর পরিণতির হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মস্কোকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের ব্যবস্থা করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলেন।