গাজার শিশুদের অবস্থা চিন্তার কারণ: শতকরা ২০ শতাংশের বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৮:৫৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৭, ২০২৫

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজায় ২০ শতাংশেরও বেশি শিশুর অপুষ্টির সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে এই পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠছে, যার ফলে পানির অভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। খবর প্রেস টিভির। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক বিবৃতিতে ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় তাপমাত্রা বর্তমানে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি, আর সীমিত পানি সরবরাহের কারণে পানির অভাব উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। সংস্থাটি তাদের সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে জানিয়েছে, গাজার শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার ২১.৫ শতাংশ, অর্থাৎ মোট প্রায় প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। অপুষ্টির তীব্র রূপের শিকার শিশুদের চিহ্নিত করতে ইউএনআরডব্লিউএ ব্যবহার করে নৃতাত্ত্বিক পরিমাপ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক এক্স-অ্যাকাউন্টে সংস্থাটি জানিয়েছে, ইউএনআরডব্লিউএর কর্মীরা অত্যন্ত ক্লান্ত, মানসিকভাবে চাপের মধ্যে এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের জন্যই খাদ্য সংকটের সম্মুখীন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে একজন শিশু অনাহারে মারা গেছে, যার ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৪০ এ পৌঁছেছে, যাদের মধ্যে ১০৭ জনই শিশু। ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর জন্য অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ বেড়ে চলেছে—সুবিধার ক্ষতি, নিরাপদ চলাচলের প্রতিবন্ধকতা এবং চিকিৎসা সরবরাহ ও জ্বালানি প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরবরাহের অভাবে দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ও সংক্রামক রোগে ভুগছেন বিভিন্ন রোগী, ফলে জনস্বাস্থ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের আগ্রাসনের জবাবে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাস একটি আক্রমণ চালালে, এর পাল্টা হিসেবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক রক্তপাতের যুদ্ধ শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধের ফলে প্রায় ৬১,৮২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১,৫৫,২৭৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আগের বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি হলেও, গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় নতুন করে তীব্র হামলা শুরু করে। এর আগে ২ মার্চ থেকে মানবিক ত্রাণের প্রবেশ বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে গেছে। গাজায় ত্রাণ সংগ্রহের সময়ও রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটছে, এখন পর্যন্ত ১৭৬০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিভাগ জানিয়েছে, মে মাসের শেষের দিকে থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে কমপক্ষে ১৭৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন—এর মধ্যে অধিকাংশই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা গেছেন। গত মে মাসে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, এই মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। একাধিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রতিদিনই ত্রাণ কার্যক্রমের সময় গুলির শিকার হচ্ছেন সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। শুক্রবারই গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জন মানবিক সাহায্য প্রত্যাশী রোগী রয়েছেন। একদিকে, ইসরায়েলি সেনারা দাবি করছে যে তারা হামাসের সামরিক ক্ষমতা বিধ্বস্ত করছে এবং অপরদিকে সতর্ক করছেন যে, বেসামরিক মানুষের ক্ষতি এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বুধবার ইসরায়েলি সেনাপ्रमুখ জানিয়েছেন, গাজায় নতুন আক্রমণের পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে, যার লক্ষ্য হামাসকে পরাজিত করা এবং বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করা। তারা গাজার শহর ও আশপাশের শরণার্থী শিবিরের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রায় দুই বছর ধরে এ অবরুদ্ধ অঞ্চলটি চলমান সংঘাতের মধ্যেই রয়েছে। শুক্রবারে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা শহরের উপকণ্ঠে অভিযান চালাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, এই চাপ যেন ব্যাপক দুর্ভিক্ষের কারণ হয়ে না আসে। কারণ ইসরায়েল গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে না। স্বাস্থ্যসেবা ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তার অভাবে পরিস্থিতি আরও অবনতি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই ভবিষ্যতকে অন্ধকার দেখছেন।