প্রধান দুই বাজারে রফতানি কমলেও উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে পোশাক খাত

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৫:০১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০২৩

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। প্রধান এই দুই বাজারেই বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমে গেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ সময়ে জার্মানিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্য থেকে বিজিএমইএ’র সংকলন করা পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এই চিত্র পাওয়া গেছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম রফতানি বাজার জার্মানিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমেছে। অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের (২০২৩) প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭৩ কোটি মার্কিন ডলারে উঠেছিল।

কিন্তু অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী,  চলতি বছর রফতানি প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো কমছে। এ বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ কমেছে। এককভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া পোশাকের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের গন্তব্য এই বাজার।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৫১৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। গত বছরের প্রথম আট মাসে দেশটিতে ৬৬২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশটির বাজারে চীন ও ভিয়েতনামের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ।

ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে পোশাক রফতানি কমে যাওয়া দেশের ও পোশাকশিল্পের জন্য উদ্বেগের বলেও মত দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ইপিবির সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে বড় এই উৎস থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৫০০ কোটি ডলার পাওয়া যায়। প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বরে রফতানি কম হয়েছে ৪৭ কোটি ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে পণ্য রফতানি থেকে এসেছে ৪৩১ কোটি ডলার। আগস্টে এর পরিমাণ ছিল ৪৭৮ কোটি ডলার। এই নিম্নমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও পোশাক খাত তার উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) সেপ্টেম্বরে একক মাস হিসাবে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪.৪৬ শতাংশ। এ সময় রফতানি হয়েছে ৩৬১ কোটি ডলারের পোশাক। আগের বছর একই সময়ে রফতানি ছিল ৩১৬ কোটি ডলারের।

যদিও পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, ক্রয়াদেশ পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নাজুক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। তারা আরও বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ক্রমেই বাড়ছিল বাংলাদেশের পোশাক রফতানি। কিন্তু ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধের পর এই দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ধীরে ধীরে কমে আসছে। বড় বড় ক্রেতা ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে জানান তৈরি পোশাক রফতানিকারকরা।

সাধারণত প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে এইচঅ্যান্ডএম প্রায় ৪ বিলিয়ন (৪০০ কোটি) ডলারের পোশাক কেনে। এছাড়া ওয়ালমার্ট কেনে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের পোশাক। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারের জন্য বাংলাদেশের পোশাকের অন্য বড় ক্রেতা হলো প্রাইমার্ক, সিঅ্যান্ডএ, গ্যাপ ও ভিএফ। এদের বিক্রি কমেছে বলেই বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন থেকেই দেশ দুটিতে পোশাকের চাহিদা কম। এ কারণে ক্রয়াদেশও কম। মূল্যস্ফীতি কমলেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি।’

অবশ্য ইপিবির তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে পোশাক রফতানি কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১. ৪৭ শতাংশ বেশি।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র মুখপাত্র ও পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘জার্মানিতে রফতানি কমলেও স্পেনে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ, ফ্রান্সে ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।’ তিনি উল্লেখ করেন, ইতালিতে ২৩ দশমিক ২২ শতাংশ আমাদের রফতানি বেড়েছে।

মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমলেও এখনও প্রবৃদ্ধিতে আছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের তৈরি পোশাক রফতানি ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একই সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রফতানি যথাক্রমে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৩৫২ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।’

এছাড়া পোশাক খাতে নতুন নতুন রফতানি বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। তুলনামূলক উচ্চমূল্যের পোশাকের ক্রয়াদেশও আসছে। খাত সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যকরণ, প্রযুক্তি আপগ্রেডেশন, উদ্ভাবনসহ প্রবৃদ্ধির নতুন সুযোগগুলো অন্বেষণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের সুফল হিসেবেই পোশাক রফতানি বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জার্মানি ও আমেরিকার বাজারে আমাদের উদ্বেগ বাড়লেও নতুন বাজারে পোশাক রফতানি বাড়ছে।’

ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি ২৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রফতানি যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক শূন্য ১ শতাং