এই সরকারের আমলে ৬০০ এর বেশি মানুষ গুমের শিকার

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:০৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০২২

গতকাল সোমবার(১৫ আগস্ট)রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ব্যাচেলেটের কাছে এ উদ্বেগের কথা মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তুলে ধরেন।এ সময় তারা বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যাক্তিদের একটি তালিকা মিশেল ব্যাচেলেটের হাতে তুলে দেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের কাছে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম, বাকস্বাধীনতা, আসন্ন নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক গ্রেফতার, মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও নারী নির্যাতন নিয়ে নানা উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশে কাজ করা মানবাধিকার কর্মীরা হোটেল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা তাদের কাজের ক্ষেত্রে সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জগুলো মিশেলের সামনে তুলে ধরেন।

গুম নিয়ে কাজ করা ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমরা জোরপূর্বক গুমের ঘটনাগুলো তার (ব্যাচেলেটের) সামনে তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, এই সরকারের আমলে ৬০০ বেশি মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের তালিকা তুলে দিয়েছি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশবিদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিকার আসলে কোথায় পাব? এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো কি রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছে? এসব বিষয় আমরা তার সামনে তুলে ধরেছি। একজন তার ভাই হারিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। সে তার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছেন না। আদিবাসীরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন, আমি পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছি। প্রতিবন্ধীরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছে। নারী নির্যাতন নিয়ে কথা বলা হয়েছে।’

কাজ করতে গিয়ে মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশবিদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিকার আসলে কোথায় পাব? এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো কি রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছে?

এসব শুনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট আপনাদের কী বলেছেন? জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘তিনি বলেছেন, আমার কাছে কোনো মিরাকেল নেই। আমরা একটা প্রসেস ওরিয়েন্টেড ডিসকাশনে যেতে পারি। তিনি আরো বলেছেন, একটা নির্বাচন হলে সব ঠিক হয়ে যাবে না। সিস্টেম ঠিক না থাকলে নির্বাচন হলেও মানুষ গণতন্ত্র পাবে না। এই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা হবে। ডায়লগের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’

মানবাধিকার কর্মী ব্যারিষ্টার সারা হোসেন বলেন, আমরা দেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছি। মানবাধিকার পরিস্থিতি কি সেটার প্রকৃত চিত্র যাতে উনি (মিশেল ব্যাচেলেট) বুঝতে পারেন সেটাই জানিয়েছি। দেশের চিত্র জাতিসংঘকে জানানো কারো পক্ষে বিপক্ষের ব্যাপার নয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চলছে।

মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, আমরা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ভালো ও মন্দ দুটি দিকই তুলে ধরেছি। সরকার যেটা ভাল করেছে সেটা তুলে ধরেছি এবং যা খারাপ করছে সেটাও তুলে ধরেছি।

মিশেল ব্যাচেলেট চার দিনের সফরে গত রোববার ঢাকায় আসেন। এদিন তিনি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।